নিজস্ব প্রতিনিধি:
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর পার করল আজ। সেতু চালুর পর গত এক বছরে যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ।
গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও ২৬ জুন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আগের মতো আর ফেরিঘাটে অসহনীয় ভোগান্তি নেই। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু। এখন খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।
গত এক বছরে ম্যাজিকের মতো বেড়েছে এই জনপদের জায়গার দাম। উন্নত হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সেতুর দুই পারের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ ঘটেছে। পদ্মার এপার ও ওপারের কৃষি ও শিল্পপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত হচ্ছে। সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব।
গত এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি। সেতু বিভাগ জানায়, ২০২২ সালের ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুতে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে। ওইসব গাড়ির টোল থেকে আয় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আয় থেকে ৬২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
ফেরি সংকটে অথবা আবহাওয়াজনিত জটিলতা, অথবা যানজটে পড়ে পদ্মা নদী পার হতে না পেরে তরমুজ বোঝাই শতাধিক গাড়ি আটকে পড়ার কাহিনী কারও অজানা নয়। শুধু তরমুজই নয়, মাদারীপুর থেকে আনা কলাই শাক, শরীয়তপুর থেকে আনা নানা ধরনের সবজি, ফরিদপুর থেকে আনা খেজুরের রস, বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে আনা তরমুজ, বাঙ্গি, আমড়া ও মুরগির ডিমবাহী ট্রাকও পদ্মার পাড়ে আটকে থাকতো, ঘণ্টা পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ফলে এসব পচনশীল পণ্য গরমে নষ্ট হয়ে যেতো।
যা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এসব পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিয়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বাড়ি ফিরতেন খালি হাতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমন পরিস্থিতির অবসান হয়েছে বলে স্বস্তিতে আছেন পদ্মার ওপারের কৃষিজীবী মানুষের।
তারা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগে সেই অবস্থা আর নেই। ওপারের ২১ জেলার কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বাড়ছে চাষাবাদ। বাড়ছে কৃষিনির্ভর খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন।
জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হচ্ছে সেসব কৃষিপণ্যের চাষাবাদ। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজ হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ক্রেতাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি। চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনে সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সময় জার্নাল/এলআর