বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

জ্বর: হালকাভাবে নেবেন না, যেকোন সময় হতে পারে প্রাণঘাতী

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৬, ২০২৩
জ্বর: হালকাভাবে নেবেন না, যেকোন সময় হতে পারে  প্রাণঘাতী

সময় জার্নাল ডেস্ক:

অসুস্থ হওয়ার একটি অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে সেটি ভালোও হয়ে যায় এবং এর জন্য খুব জটিল চিকিৎসার দরকার হয় না।

জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়। এটি অন্য কোনো রোগের লক্ষণ মাত্র। সবচেয়ে সাধারণভাবে বলা যায়, দেহে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির আক্রমণে জ্বরে ভোগ মানুষ।

কিছু কিছু জ্বর রয়েছে যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়েও দেখা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে-

১. ডেঙ্গু:
বাংলাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু মৌসুম চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে নয় হাজারের বেশি মানুষ।

এজন্য এই মৌসুমে কারো জ্বর হলে, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, শরীর ব্যথা যদি থাকে তাহলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এবার ডেঙ্গু মারাত্মক হচ্ছে এবং সাধারণ ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণও থাকছে না। তাই জ্বরের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

‘রোগীর দু-একদিন জ্বর, অল্প গলাব্যথা, কাশি, হঠাৎ করে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, শক সিনড্রোম হচ্ছে, অজ্ঞান হয়ে যায়, পালস পাওয়া যায় না, ব্লাড প্রেশার পাওয়া যায় না এবং অনেকে মারা যাচ্ছে। প্রায়ই মারা যাচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে,’ বলেন চিকিৎসক এ বি এম আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা মানুষরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তা জটিল হওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি থাকে।

‘যাদের অন্য রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, স্ট্রোকের রোগী, হার্টের রোগী- যাদের মেডিক্যাল টার্মে বলে কো-মরবিডিটি, এ ধরণের রোগ যাদের আছে তাদের যদি জ্বর আসে তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।’

আব্দুল্লাহ বলছেন, কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায়। এটি আসলে মৃত্যু এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন তিনি।

ডেঙ্গু রোগীদের শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ মানেই তা হেমারেজিক ডেঙ্গুতে রূপ নিয়েছে। হেমারেজিক ডেঙ্গুতে চোখে রক্ত জমে যায়, নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে, মুখ, কান, মলদ্বার এ রকম যেকোনো একটি বা একের অধিক অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। বমি ও কাশির সাথেও রক্ত বের হতে পারে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান এর আগে বলেন, ‘হেমারেজিক ডেঙ্গুতে রোগী মারা যেতে পারে যদি ব্রেইন, হার্ট এ রকম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে যদি হেমারেজ হয়।’

২. ইয়োলো ফিভার বা হলুদ জ্বর
ইয়োলো ফিভার বা হলুদ জ্বর মশার কামড়ে ছড়ায় এবং এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। এডিস এবং হেমাগোগাস মশার কামড়ে এই জ্বর ছড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হলুদ জ্বরে লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাংসপেশী ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি। সাধারণত তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে খুবই কম সংখ্যক রোগী এই জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক এসব উপসর্গ থেকে সেরে ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে পৌছায়।

এই ধাপে, শরীরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায় এবং আবারো জ্বর আসে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে লিভার এবং কিডনি আক্রান্ত হয়। এই ধাপে মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। শরীরের ত্বক এবং চোখে হলুদ হয়ে যায়।

এ কারণেই একে ইয়োলো ফিভার বা হলুদ জ্বর বলা হয়। এ অবস্থায় মূত্র গাঢ় রঙের হয়, পেট ব্যথা এবং বমি হয়। মুখ, নাক, চোখ বা পেটে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেসব রোগী এই ধাপে পৌছায় তাদের মধ্যে অর্ধেকই সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে মারা যায়।

এই জ্বর নিরোধক কোনো ওষুধ নেই। তবে এটি টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।

৩. ম্যালেরিয়া
কারো যদি জ্বর থাকে এবং জ্বরের সাথে সাথে ঠাণ্ডা, মাথাব্যথা, ক্লান্তিভাব, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি ও নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাহলে দেরি না করে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কারণ এসব লক্ষণ প্রাণঘাতি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

অ্যানোফিলিস নামে এক ধরণের স্ত্রী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে বা তার ব্যবহৃত সুঁচ ব্যবহারের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। প্রাথমিক উপসর্গগুলো সাধারণ জ্বর আক্রান্তের মতোই মৃদু হয় এবং ম্যালেরিয়া বলে সনাক্ত করাও কঠিন। তবে এটি মারাত্মক আকার ধারন করলে আক্রান্ত ব্যক্তি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারে।

ম্যালেরিয়া একটি প্রাণঘাতী রোগ এবং এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে বেশি সংক্রমিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় লাখ ১৯ হাজারের বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী, সফরে থাকা ব্যক্তি এবং হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাসে (এইচআইভি) আক্রান্ত ব্যক্তিরা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

৪. টাইফয়েড জ্বর
টাইফয়েডের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে উচ্চমাত্রায় জ্বর। এছাড়া প্রচণ্ড ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি, পেট ব্যথা এবং আমাশয় ও ডায়রিয়াও থাকে। জ্বরের সাথে এ ধরনের উপসর্গ অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়। তাই চিকিৎসকের এ ধরণের উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পরামর্শ দেন।

টাইফয়েডে আক্রান্ত অনেক রোগীর দেহে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এক লাখ ১০ হাজার মানুষ বিশ্বজুড়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর আক্রান্ত হয় ৯০ লাখের বেশি মানুষ।

সালমোনেলা টাইফি নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টাইফয়েড ছড়ায় যা প্রাণঘাততী একটি রোগ। এই ব্যাকটেরিয়া একবার শরীরে ঢুকে পড়লে তা বিভাজিত হতে থাকে এবং এটি রক্তে মিশে যায়। সাধারণত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে এটি ছড়ায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড শনাক্ত করা যায়।

সময় জার্নাল/এলআর 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল