মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা :
গতকালকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটা কিন্তু গাজায় ২৮ জন নিহত হওয়ার সংবাদও না, বা তেল-আবিবে হামাসের রকেট নিক্ষেপের সংবাদও না। গতকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটা ছিল খোদ ইসরায়েলেরই বিভিন্ন শহরে মুসলমানদের বিক্ষোভ, রায়ট এবং সংঘর্ষ।
৬৭ সালে দখল করা অংশ বাদ দিলেও এর পূর্বের ইসরায়েলি ভূখন্ডেও কিন্তু ২০% আরব জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে ২% আরব খ্রিস্টান, বাকি ১৮% আরব মুসলমান বা আদি ফিলিস্তিনিরা, যারা কখনোই তাদের বসতভিটা ছেড়ে যায়নি।
এই আরব ইসরায়েলিরা ইসরায়েলের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো, যেহেতু বাই ডেফিনেশনই ইসরায়েল একটা জুয়িশ কান্ট্রি। তারা জুয়িশ নেইবারহুডগুলোতেই বসবাস করে, কিন্তু সব সময়ই বিশেষ নজরদারিতে থাকে। ফলে গাজায় বা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসন হলেও তাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না।
কিন্তু গতকাল দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। আল-আকসা মসজিদে এবং গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে ইসরায়েলের এই মুসলমান নাগরিকরা তাদের ভয়কে অতিক্রম করে রাস্তায় নেমে আসে। আল-লদ, হাইফা, আক্রা, রামলা, নাসরা, রাহাতসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে, যেসব শহরের নাম আমরা জীবনে কোনোদিন নিউজে দেখি না।
বেশ কিছু শহরে পুলিশ এবং রাইট উইং জুইশ এক্সট্রিমিস্টরা মিছিলের উপর হামলা করলে পরিস্থিতি ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে, ভবনে এবং একটি সিনেগগে আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেকগুলো শহরে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তারা কিছু কিছু এলাকা থেকে ইহুদী নাগরিকদেরকে সরিয়ে নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত বর্ডার গার্ডকে তলব করে। এবং আল-লদ শহরে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে।
ইসরায়েল সব সময় একতরফাভাবে গাজা আর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতেই আক্রমণ করেছে। তাদের নিজেদের শহরগুলো সব সময়ই নিরাপদ ছিল। গতকাল এক রাতের জন্যও তাদের নাগরিকদেরকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছিল। আগুনের কিছুটা উত্তাপ গতকাল তারাও অনুভব করেছে। ইসরায়েলের জন্য এই ঘটনা ছিল আনপ্রেসিডেন্টেড। এরকম দৃশ্য আর কখনো দেখেছি কিনা, মনে করতে পারি না।
গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে হয়রানির শিকার হওয়ার নিশ্চিত ঝুঁকি মাথায় নিয়েও যে আরব ইসরায়েলিরা আকসার জন্য, গাজার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অপ্রেসিভ রেজিমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, পাথর ছুঁড়েছে, গাড়ি পুড়িয়েছে, এটা মোটেও ছোট ঘটনা না। দ্য প্যালেস্টিনিয়ান কজ ইজ নট টোটালি লস্ট।
সময় জার্নাল/ইএইচ