মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
মৌসুমি বৃষ্টির উপর নির্ভর করেই আমন ধান চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বর্ষাকালে জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি দিয়েই প্রথমে বীজতলা তৈরী তার রোপনের কাজ চলে। কিন্তু উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় মৌসুমি বৃষ্টির দেখা নেই। আষাঢ় শেষ হয়ে শুরু হয়েছে শ্রাবণ মাস। অথচ মাঝেমধ্যে সামান্য ছিটে ফোটা বৃষ্টি হলেও তা ফসলের তেমন কোনো কাজে আসছে না। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন রোপা আমনচাষীরা।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেসব জেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরা। গত তিন বছর সাতক্ষীরা জেলায় ঠিকমতো মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয় না। যার প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন ফসলের ওপর।
প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে রোপা আমন চাষ তো দূরের কথা, অধিকাংশ কৃষক এখনো বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। মৌসুমি বৃষ্টি যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে চলতি রোপা আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষককে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের রুহুল আমিন মোড়ল জানান, এলাকায় অধিকাংশ জমিতে চিংড়ি ঘের হলেও প্রায় চার বিঘা জমিতে বর্ষা মৌসুমে আমন ধান চাষ করে থাকি। এই জমিতে উৎপাদিত ধান দিয়েই আমার সংসারের প্রায় সারা বছরের চাউলের চাহিদা মিটে যায়। পাটকেলঘাটা থেকে বীজ ধান কিনে এনে রেখেছি অনেক আগে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার এখনো বীজতলা তৈরী করতে পারিনি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দহকুলা কৃষক পান্না হোসেন জানান, প্রতি রোপা আমন মৌসুমে ১০-১২ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করেন তিনি। কিন্তু গত দু-তিন বছর মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এখনো বীজতলা তৈরি করতে পারেননি তিনি। বৃষ্টি না হওয়ায় তার এলাকার অধিকাংশ কৃষক চিন্তিত। অথচ এখন রোপা আমনের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু এলাকার কৃষক এখনো আবাদে যেতে পারেননি। পান্না হোসেনের মতো জেলার কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে আছেন বীজতলা তৈরি করবেন বলে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৮৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ৯৩০, তালায় ১০ হাজার ৭২০, দেবহাটায় ৫ হাজার ৪৮০, কালীগঞ্জে ১৭ হাজার ১০, আশাশুনিতে ৯ হাজার ২৬০ এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮২৫ হেক্টর।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের যে কয়টি জেলায় প্রকৃতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এ জেলায় গত তিন বছর ধরে ঠিকমতো মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়নি। এর ফলে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া এমন আবহাওয়া যদি আগামী আরো পাঁচ বছর থাকে তাহলে মিঠা পানির মৎস্য চাষও ব্যাহত হবে। এরই মধ্যে লবণ পানির মাছ উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এখন থেকে ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেয়ার পাশাপাশি জলাশয় ও পুকুরে পানি ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এখনো আমন মৌসুম শেষ হওয়ার যথেষ্ট সময় বাকি আছে। তার পরও আমনচাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেসব এলাকায় ভূগর্ভের পানি মিঠা সেসব এলাকায় ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে আমন বীজতলা তৈরি করতে হবে। তবে আমন চাষে বৃষ্টির পানির কোন বিকল্প নেই। কারণ ভূগর্ভেও পানিতে আর্সেনিকের পাশাপাশি আয়রন ও লবণ থাকে। এগুলো মাটি ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর। তবে মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ার মূল কারণ হিসেবে তিনি জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ি করেন।
সময় জার্নাল/এলআর