মো: কামরুল হুসাইন:
বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার উৎস জাতীয় সংসদ, দেশের মানুষের ভাগ্য, জীবনযাত্রা সর্বোপরি সকল আইনের উৎস জাতীয় সংসদ, পুরো বাংলাদেশে ৩০০টি সংসদীয় আসন রয়েছে, গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এখানে দেশের মানুষের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার জন্য আইন প্রণয়ন করে, দেশ পরিচালনার রূপরেখা ঠিক করে, ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান পর্ব কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় সকলেই দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদে এসেছেন, বছরের পর বছর গণমানুষের অধিকার আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত, হয়তো সবাই বিলাসী জীবনধারী কিংবা টাকার কুমির ছিলেন না, ছিলেন না জমিদার, নবাব কিংবা রায় বাহাদুর বংশের, কিন্তু তাদের ভেতর মার্জিত জীবনযাপন, শিক্ষা-দীক্ষা, নাম,যশ ইত্যাদির কোন ঘাটতি ছিল না, এককথায় তাদের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ, মানুষের প্রতিনিধি হওয়ার যত ধরনের নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়ার জন্য যা যা দরকার সেসবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব হীরের টুকরোদের উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। রাজনীতি করিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলের সংগ্রাম করছিলেন। ৭৫এর কলংকজনক অধ্যায় বাংলাদেশ কে ১০০বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। একইসাথে দুর্দশাপন্ন, অবক্ষয়ের প্রচলন শুরু করেছিল মানুষের ভাগ্য বদলের হাতিয়ার, উন্নয়নের প্রতিনিধিদের। এরপর সামরিক শাসকদের ক্ষমতা উৎসব বাংলাদেশকে যেমন বঞ্চিত করেছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেকে, তেমনি জনপ্রতিনিধিদের বেলায়ও এসেছে অজ্ঞতা, অবক্ষয়ের ছোয়া। এমনকি ১৯৯১সালে সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পরও বাংলাদেশ বয়ে গেছে সামরিকতন্ত্র তথা ডিকটেটরশিপের যুগে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র। ১৯৯৬সালে দীর্ঘ ২১বছর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সংসদে নিয়ে মানুষের অধিকার নিয়ে বছরের পর বছর সংগ্রাম করা প্রজ্ঞাবানদের যারা উপহার দিয়েছিল এক প্রাণবন্ত সংসদ, ২১বছর পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র আবার যেন আইসিইউ থেকে ফিরে এসেছিল, দেশের আইনসভা আবার গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সূতিকাগার হয়ে উঠেছিল। কারণ একটাই শেখ হাসিনা সঠিক নেতৃত্ব তুলে নিয়েছিল। যারা ছিল বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাবান, মানুষের চাওয়া পাওয়ার পালস ধরতে পারত, কিন্তু ২০০১সালে আবার বিদেশি ষড়যন্ত্রে হোচট খায় বাংলাদেশ। ক্ষমতায় আসে সামরিকতন্ত্র এ জন্ম দেওয়া দল বিএনপি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামাতগোষ্ঠী, তাদের হাত ধরে কলুষিত হয় জাতীয় সংসদ, যার ফলাফল এক এগারো সরকার যা প্রায় ধ্বস নামিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, হরণ করেছিল মানবাধিকার গণতন্ত্র।
এরপর ২০০৮সালে দিন বদলের ম্যান্ডেট নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে আবার সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ফলাফল আবার পুরোদেশব্যাপী মেগাপ্রকল্প, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ডিজিটাল বিপ্লব এককথায় উন্নয়নের মহাস্রোত বইতে শুরু করে, অল্পদিনেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়, সর্বত্র জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, কেউ চাইলে অন্য কারো উপর জুলুম,অত্যাচার দিনশেষ হয়ে এককথায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশ উঠে উন্নয়নের মহাসড়কে।
বাংলা প্রবাদ৷ আছে,❝ সুখে থাকলে ভূতে কিলায়❞ বাংলাদেশের মানুষের বেলায়ও তাই হয়েছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এর নামে একশেণীর মানুষ মাতলামি,উন্মাদনায়, ❝নাই কোন কাজ তো খই ভাজের মতো ❞ যে যেখানে যোগ্য না তথা অযোগ্য লোকেরা নিজেদের যোগ্য করায় চেষ্টায় মত্ত, যাদের পেছনে কুশীলব,প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এদেশের অভিজাত শ্রেণীর কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন মানুষ যারা সমাজ থেকে বিচ্যুত, নেই গণমানুষের সাথে সংশ্লিষ্টতা।
একবার প্রয়াত জাতীয় নেতা ও সংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে বলেছিলেন,❝এমপি হওয়া এখন কাচকি মাছের ভাগার মত হয়ে গেছে, সবাই এমপি হতে চায় যা রাজনীতিতে অবক্ষয়ের চিত্র, সময়ের চিত্রপটে বগুড়ার এক স্বশিক্ষিত, ডিশ ব্যবসায়ী, ইউটিউবার হিরু আলম, যে কিনা এমপি হতে চায়!
গণতন্ত্র চালু হয়েছিল সব শ্রেণীর মানুষের জন্য যেন সকলে স্বাধীনভাবে চলতে পারে,মনের ভাব বিনিময় করতে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে এককথায় রাষ্ট্রের সকল আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন সকল কাজে স্বাধীনভাবে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে ইদানিংকালে গণতন্ত্রের অপব্যবহার করে অযোগ্যদের ব্যর্থ আস্ফালন, অপচেষ্টা ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেছে, গণতন্ত্রকে করেছে কলুষিত।
সাম্প্রতিককালে এরকম একটি চিত্র ফুটে উঠেছে গত ১৭জুলাই ঢাকা ১৭আসনের উপ-নির্বাচনে। এক ডিশ ব্যবসায়ী হিরু আলম যে স্বভাবদোষের জন্য কয়েকটি বিয়ে করেও কোনও স্ত্রীকে ধরে রাখতে পারেনি,আবার অবৈধ সম্পর্কের বেলায়ও আকর্ষণীয় পারফরম্যান্সধারী, আর ইউটিউব, ফেসবুকে অপসংস্কৃতি এক সমৃদ্ধভান্ডারের অধিকারী। একশ্রেণীর বাতিল, অপরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রচ্ছন্ন উৎসাহে গণতন্ত্রের নামে রাজনীতিকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে চলেছে, জাতীয় সংসদের সদস্য হতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে কলুষিত করে চলেছে যে কিনা মার খাওয়ার নাটক করে টিকটিক করে, ভিডিও বানায় যা ইতিমধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম সহ সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃশ্যমান। এধরনের সিজনাল রাজনৈতিক চরিত্র যারা ঠিকমতো পড়তে জানে না, অপসংস্কৃতির নামে সংস্কৃতিকে কলুষিত করে, গণতন্ত্রের নামে রাজনীতিকে ধর্ষণ করে, জিটালাইজেশনের মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থাকে অপবিত্র করে তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে রুরিভাবে;
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পরিবার পরিজন হারা এতিম বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের জন্য দেশি-বিদেশি অপশক্তি প্রতিহত করে, নিজের জীবন বাজি রেখে ভিশন ২০৪১ তথা উন্নত বাংলাদেশের জন্য দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সারাদেশে সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়নের মহাযজ্ঞ এককথায় উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে,
এই মহান যাত্রাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে, ডিজিটাল ব্যবস্থায় অপসংস্কৃতির লাগাম টেনে ধরতে হবে কারণ একটি দেশ কিংবা জাতি কতটুকু তার মাপকাঠি নির্ধারণ উক্ত দেশের সংস্কৃতির চিত্র।। অবিলম্বে দেশে নির্বাচনে শিক্ষা যোগ্যতার মাপকাঠি ঠিক করতে দিতে হবে; অশিক্ষিত, মূর্খরা জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে না, পারে বছরের পর বছর পিছিয়ে নিতে, সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে, কারণ তাদের কোন ভিশন নাই,তারা দূরদর্শী চিন্তা করতে পারে না, জানে না তারা প্রচলিত সমাজ কিভাবে চলবে, ভবিষ্যৎ দুনিয়া কেমন হবে???
লেখক: মো: কামরুল হুসাইন
সহ-সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।