বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ ঈদ

বৃহস্পতিবার, মে ১৩, ২০২১
আজ ঈদ

সময় জার্নাল নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ -এই সুরের লহরী এখন ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে। মনপ্রাণ উছলে উঠছে ঈদের আনন্দ-রোশনাইয়ে। পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম-সাধনা শেষে খুশির সওগাত নিয়ে এলো ঈদুল ফিতর। ত্রিশ রোজা পূর্ণ হলো। সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে শাওয়ালের নতুন বাঁকা চাঁদ অবলোকন করে ঘরে ঘরে মানুষ আনন্দ উদ্বেলিত।

আজ শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর।সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উত্সাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের নামাযে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া এবং ঈদুল আযহার নামাযের পরে খাওয়া মুস্তাহাব। ঈদুল ফিতরের নামাযে যাওয়ার আগে কিছু খেজুর খেয়ে যাওয়া অন্যতম একটি শিষ্টাচার। যেহেতু সহিহ বুখারীতে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকটি খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন...। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। [সহিহ বুখারী (৯৫৩)] নামাযে যাওয়ার আগে খাওয়া মুস্তাহাব এই কারণে যাতে করে সেই দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর তাগিদ দেওয়া যায় এবং পানাহার করা ও রোযা সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়া যায়।

ঈদ উল ফিতর আরবি শব্দ। ঈদ’ অর্থ আনন্দ, উত্সব, খুশি। আর ফিতর অর্থ ভাঙা, চিড়, ভাঙন। ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোজা ভাঙার পর্ব বা উত্সব। ঈদের শাব্দিক অর্থ হলো ‘বারবার ফিরে আসা’।এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঈদ। আল্লাহ তা‘আলা এদিনে তার বান্দাকে নি‘আমাত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করে থাকেন, বারবার ইহসান করেন।

এই দিনে ধনি-গরিব, বাদশাহ-ফকির নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করেন,একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। পরস্পর বলবেন, 'তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থ, 'আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার নেকা আমল তথা ভাল কাজগুলো কবুল করুন।' কিংবা ঈদ মোবারক কিংবা এ ধরণের অন্য যে কোন বৈধ ভাষায় মঙ্গল কামনা করা। ঈদের শিস্টাচার হলো, ঈদ উপলক্ষে সুন্দর পোশাকাদি পরিধান করা,নামাযের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরত আসা,ঈদের দিনে তাকবীর দেওয়া।

ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উত্সব। ঈদুল ফিতরের দিনটি প্রতিটি মুসলমান নারী ও পুরুষের জীবনে তাৎপর্যে ও মহিমায় অনন্য। এক মাস সংযম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির যে প্রচেষ্টা বিশ্বাসীগণ চালান, ঈদুল ফিতর তারই পূর্ণতার সুসংবাদ। ঈদুল ফিতর-এর তাৎপর্য হলো সিয়ামের দাবি পূর্ণ করে নতুন অবস্থায় উত্তীর্ণ হবার খুশি।

আইয়্যামে জাহেলিয়া বা ইসলাম পূর্ববর্তী যুগেও আরবে ‘নাইরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুইটি বাত্সরিক উত্সব ছিল খুব জনপ্রিয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান যে, এই দুইটি জাতীয় উত্সবে মদিনার আবাল বৃদ্ধ বণিতা নানা প্রকার স্থূল খেলা ও উত্সবে মেতে উঠেছে। মহানবী তাদের লক্ষ্যহীন আনন্দ-উত্সবের পদ্ধতির পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমণ্ডিত এবং বহুবিধ কল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেক জাতির বাত্সরিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। ঈদের দিন হচ্ছে আমাদের জন্য সেই আনন্দ-উত্সবের দিন। এভাবেই হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে মুসলিম সমাজে প্রবর্তিত হলো ঈদ।

ঈদ বাংলাদেশে সার্বজনীন উৎসব। ধর্মের গণ্ডি পার হয়ে ঈদ সাবলীল সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। মূলত ইনসান-ই-কামিল হওয়া বা পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের মধ্যেই ঈদের সার্থকতা নিহিত। এজন্য পাড়া-প্রতিবেশী ধর্ম ও সামাজিক কাঠামোর যে শ্রেণিরই লোক হোক তাকে ঈদের আনন্দে শরিক করা কর্তব্য। একই কারণে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে যে কোনো মানুষের সঙ্গে পূর্বের শত্রুতা, বিবাদ-বিসংবাদ, মনোমালিন্য প্রভৃতি মিটিয়ে ফেলা উচিত।

ঈদের খুশি যেন একেবারে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়: ’আজি আরাফাত ময়দান পাতা গাঁয়ে-গাঁয়ে,/ কোলাকুলি করে বাদশাহ-ফকিরে, ভায়ে-ভায়ে’.... ’আজি ইসলামী ডঙ্কা গরজে ভরিজাহান/ নাই ছোট-বড় সকল মানুষ এক সমান!.. “ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,/ সুখ-দুখ সমভাগ করে নেব সকলে ভাই,/ নাই অধিকার সঞ্চয়ের..।’ একমাস রোজার শেষে ঈদের আনন্দ প্রতিটি মানুষের মনে খুশির দ্যোতনা ছড়ালেও দরিদ্ররা কি সেই আনন্দে ভাসতে পারছে? কবির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে: “জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ/ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?

মুলত যারা এক মাস সিয়াম পালন করে কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এ ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার হচ্ছে ঈদ।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঘরবন্দি ঈদের জামাত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে এবার জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার কারণে ঈদুল ফিতরের জামাত ঈদগাহ অথবা খোলা জায়গায় না করার আহবান জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়।সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেক মসজিদেই একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। অতিসম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সার্কুলার জারি করেছে। এ জন্য এবার রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ও দু’সিটি করপোরেশনের অধীনে কোনো খোলা জায়গা বা মাঠে ঈদ জামাত হচ্ছে না। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা পর পর ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

সময় জার্নাল/এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল