আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তবে কারাগার থেকে এবার তাকে গৃহবন্দি হিসেবে থাকতে হবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে সামরিক জান্তা। খবর বিবিসির।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ জুলাই) নেইপিদোর একটি সরকারি ভবনে সু চিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে কারাগারের বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি প্রায় এক বছর ধরে নির্জন কারাবাসে শাস্তি ভোগ করছেন।
৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ৩৩ বছরের সাজা হয়েছে। তখন থেকেই দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে চলে গেছে। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। সেনা আদালতে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যেই তার সাজা ঘোষণা করা হয়। প্রায় দুই বছর ধরে সু চির অবস্থা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কারাগার থেকে তার স্থানান্তরের বিষয়টি সামরিক জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে তাকে কারাগার থেকে বের করে গৃহবন্দী করার পদক্ষেপকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এই নেতাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই চাপের মধ্যে আছে জান্তা সরকার।
এর আগে গুঞ্জন উঠেছিল যে, সু চি অসুস্থ। কিন্তু সেই গুঞ্জন অস্বীকার করে জান্তা সরকার। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি নেইপিদোর যে কারাগারে ছিলেন সেখানকার একটি সূত্র নিশ্চিত করে যে, তিনি সুস্থ আছেন।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও চলতি মাসে নিশ্চিত করেন যে, তিনি দেশটিতে সফরের সময় অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।
এর আগে সু চিকে মুক্তি দিতে দেশটির সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানান তার ছোট ছেলে কিম অ্যারিস। তাছাড়া তিনি তার মাকে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব মোড়লদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান।
ব্রিটিশ নাগরিক কিম অ্যারিসের দাবি, সেনাবাহিনী তাকে তার মায়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। তিনি বার্মিজ দূতাবাস, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কেউ-ই তাকে সাহায্য করতে পারেনি।
অবশ্য ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এরপরও মিয়ানমার অস্ত্র আমদানি ও অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল আমদানি করে যাচ্ছে।নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সু চি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণতন্ত্রের আইকনদের একজন। প্রায় ১৫ বছর আটক থাকার পর ২০১০ সালে তার মুক্তি মিয়ানমার ও সারাবিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
পরবর্তীতে মিয়ানমারের ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ ওঠে। নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে ও বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।
সময় জার্নাল/এলআর