নিজস্ব প্রতিনিধি:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ৩ বছর আজ (সোমবার)। ২০২০ সালের এ দিনে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের কতিপয় সদস্য সিনহাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় আদালত টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাস ও বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে (বরখাস্ত) মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত ও পুলিশের তিন সোর্সসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আর মামলা থেকে সাত পুলিশ সদস্যকে বেকসুর খালাস পান। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন আসামিরা। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, বিচক্ষণ, উদ্ভাবনশীল এবং একজন চৌকস স্বাধীনচেতা সেনা অফিসার। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রকর্তৃক ঘোষিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফের সদস্যও ছিলেন।
২০১৫ সালে সা সার্টিফিকেট অর্জন করেন সিনহা। একই বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) থেকে ‘ওয়ার্কশপ অব ডিজেস্টার অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট’ সার্টিফিকেট অর্জন করেন। পরের বছর ডিএসসিএসসি থেকে ‘মাস্টার অব সায়েন্স ইন মিলিটারি স্ট্যাডি’ এবং ‘পিএসসি’ কোর্স সফলতার সঙ্গে শেষ করেন।
এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ৫ আগস্ট পুলিশের ৯ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ওসি প্রদীপ। চার মাস দশ দিন পর কক্সবাজার আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগপত্রে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে নয়জন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য, তিনজন এপিবিএনের সদস্য এবং তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে যাবজ্জীবন আর সাতজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে প্রদীপ-লিয়াকত ছাড়া তিনজন পুলিশ সদস্য আর তিন জন পুলিশের সোর্স। বর্তমানে সব অভিযুক্তই কারাগারে আছেন।
মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
মামলা থেকে অব্যাহতি পান পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন করতে হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। এ বিষয়ে এখনো শুনানি শুরু হয়নি।
সময় জার্নাল/এলআর