ইসাহাক আলী, নাটোর:
দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও বেধড়রক মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ি থেকে অটো রিকশায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার পথে শহরের চকবৈদ্যনাথ গুড়পট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনার জন্য বিএনপি আওয়ামীলীগকে দায়ী করলেও তারা বলছেন বিএনপির অভ্যন্তরণীন দ্বন্দের কারণে এ হামলা হতে পারে। তবে হামলার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অস্বীকার করলেও বিএনপির নৈরাজ্য ঠেকাতে অবস্থান নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল। এসব ঘটনার পর কেন্দ্র ঘোষিত নাটোরের জনসমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু। আর এ হামলার প্রতিবাদে জেলা জুড়ে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি। এদিকে বিএনপি কর্মী ভেবে দুই পথচারীকেও পিটিয়েছে সরকার সমর্থিত অবস্থানকারীরা।
সূত্র জানায়, দেশ ব্যাপী জনসমাবে, কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে রহিম নেওয়াজকে লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। এদিকে এ ঘটনার পর আওয়ামীলীগের কর্মীদের লাঠিসোঁটা হাতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে দফায় দফায় মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সেখানে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুল।
এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শহরের আলাইপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষ্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ ভোর পাঁচটার দিকে তার বাড়ি সদর উপজেলার ছাতনী গ্রাম থেকে অটো রিকশা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি শহরের চকবৈদ্যনাথ গুড়পট্টি এলাকায় পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে। তাকে লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। তিনি অচেতন হয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখানে তার পরিস্থিতির অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক
পুলিশ মোতায়েন ছিল।
জেলা বিএনপির সদস্য কাজী শাহ আলম এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, হত্যার পরিকল্পনা করেই রহিম নেওয়াজের ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি জনসমাবেশ সফল করার জন্য ভোরেই বাড়ি থেকে দলীয়
কার্যালয়ে আসছিলেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আপাতত জনসমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান হামলায় জড়িতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির অভিযোগ সত্য নয়। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ঘটনাস্থল চকবৈদ্যনাথ গুড়পট্টি এলাকায় ছিল না। পূর্ববিরোধের জেরে বিএনপির কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এদিকে যুবলীগের মিছিল সমাবেশ শেষে নেতাকর্মিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকালের সমাবেশে আমি নেতাকর্মিদের বিএনপির দেশ বিরোধী কর্মকান্ডের প্রদিবাদে
মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। তার অংশ হিসাবে নেতাকর্মিরা ভোর থেকেই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে। আর যেহেতু বিএনপি অফিস থেকে বিক্ষোভ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় তাই সেখানেই নেতাতকর্মিরা অবস্থান নিয়েছে। কাউকে নৈরাজ্য করতে দেয়া হবে সকলকে প্রতিহত করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
এদিকে নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেছেন, জেলা বিএনপির সদস্যসচিবকে পেটানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। হামলাকারী ব্যক্তিদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তে সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমআই
