সময় জার্নাল ডেস্ক:
এ বছর ডেঙ্গুর যে প্রকার দেখা যাচ্ছে, সেগুলো সেকেন্ডারি ফর্মের। অর্থাৎ আগে যিনি ডেঙ্গুর অন্য কোনো উপধরণ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি এখন আরেকটি ধরণ বা উপধরণ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার যখন কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তখন মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এবারে তাই হচ্ছে। এমনটাই বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চাপে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় ২০১৯ সাল থেকে। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত ভয়াবহতায় আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ কিংবা প্রচারে খুবটা একটা গরজ নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। তাদের ধারণা, স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গুর যে হিসাব দিচ্ছে তার বাইরেও হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
চলতি আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, এডিস মশা নির্মূল ও রোগী ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্যের পরামর্শ উপেক্ষিত হচ্ছে। শুরু থেকেই রয়েছে সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি।
ডেঙ্গু নিয়ে সামনে আরেকটা বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে বলে জানিয়ে তারা বলেন, আগে এই রোগটিকে শহুরে রোগ বলা হলেও পরিসংখ্যান বলছে রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে খ্যাতিমান মেডিসিনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, চলতি বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসাব আসছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। অনেকের ঘরেই জ্বরের রোগী আছে, চিকিৎসা নিচ্ছে না। ঘরে থেকেই ভালো হয়ে যাচ্ছে। সেগুলোতো রিপোর্টে আসে না।
এভাবে যদি বাড়তে থাকে অবস্থা আগামী এক থেকে দুই মাসে আরও খারাপের দিকে যাবে। যত আক্রান্ত হবে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। ডেঙ্গু রোগীর জন্য রক্তের তেমন দরকার নেই জানিয়ে এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু হলে আবার অনেক রক্ত দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়। তবে রক্ত দেওয়ার দরকার নেই ডেঙ্গু মশার জন্য। রক্ত তখনই লাগে যখন রোগীর রক্তপাত হয়। সেখানে চিকিৎসক চাইলে রক্ত দিতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে খুব বেশি প্লাটিলেট প্রয়োজন হয় না। যারা মারা যায় তারা প্লাটিলেট কমের জন্য মারা যায় না। অনেক মারা যায় প্লাজমা লিকেজের ফলে। শরীর থেকে লিক্যুইড চলে যায়। যেমন প্রেসার কমে যায়, প্রস্রাব হয় না, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর শকে চলে যায়।
জুলাই মাসের ৩১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী, মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের। এক মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এ বছরের মোট সংখ্যার তিন চতুর্থাংশ।
আর আগস্টের প্রথম চার দিনে ১১ হাজার ৩৯৮ জন রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালে। মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের।
সময় জার্নাল/এলআর