ক্রীড়া প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটলেও আলোচনায় থাকছে ক্রিকেট। তামিম ইকবালের অবসর, কোমরের চোট ও এশিয়া কাপে খেলা না খেলার বিষয়গুলো ছিল আলোচিত। বৃহস্পতিবার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তামিম ইস্যু চাপা পড়তে শুরু করেছে। এখন নতুন করে আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে অধিনায়ক নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে বিসিবির প্রথম পছন্দ সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞতা, ক্রিকেটীয় মেধা বিবেচনায় নিলে তাই হওয়ার কথা।
এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক করার প্রস্তাব করা হলে সাকিব রাজি হতেন না। বিসিবি যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্বটা দিতে চাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সাকিবেরও মত পরিবর্তন হতে পারে। গতকাল আবাহনী ক্লাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মনোনয়ন করা নিয়ে শিগগির ফোনে কথা বলবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের সঙ্গে। পাপনের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে হয়তো না করতে পারবেন না সাকিব। কারণ, তিনিও তো চান ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে ভালো করুক বাংলাদেশ। এ ছাড়া তামিম স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব ছাড়ায় সাকিবকে নেতৃত্বে আনা হলে বিতর্কিত হওয়ারও কিছু নেই।
বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশ আগে থেকেই বিশ্বকাপে সাকিবকে অধিনায়ক করার পক্ষে ছিলেন। বিভিন্ন মঞ্চে এ নিয়ে আলোচনা হলেও বিসিবি সভাপতি পাপন ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান তামিমেই আস্থা রেখেছেন। পুরোপুরি ফিট থাকলে অধিনায়ক বদলের কোনো সুযোগ ছিল না। কোমরের ব্যথা থাকায় টানা ম্যাচ খেলার অনিশ্চয়তার বিষয়টি বুঝতে পেরে তামিম নিজে থেকেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। তাই নতুন অধিনায়ক নির্বাচনের একটা বাধ্যবাধকতা চলে এসেছে।
বিসিবি পরিচালকরাও সাকিবকে অধিনায়ক হিসেবে পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। যদিও গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকার ফোন পাননি সাকিব। লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) গলে টাইটান্সের হয়ে ম্যাচ খেলতে এ মুহূর্তে ক্যান্ডিতে রয়েছেন টাইগার টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক। সেখানে পরিবার নিয়ে ভালো সময় কাটছে তাঁর। এই ভালো লাগা মধুর করে তুলতে পারে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দেওয়া চূড়ান্ত হয়ে গেলে।
তামিমের নেতৃত্ব ছাড়ার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, নতুন অধিনায়ককে দীর্ঘ মেয়াদে মনোনীত করা হবে। দুই বছরের কথা স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি। গতকাল বলেছেন, ‘সাকিবের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের জানতে হবে সে দুই বছর খেলবে কিনা। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে সে আমাদের অবধারিত পছন্দ। হ্যাঁ, লিটনও আছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আর বিশ্বকাপ এক না। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে দায়িত্ব দেওয়া হলে চাপে তার ব্যাটিংয়ের ক্ষতি হয় কিনা। তাই আমরা আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
সেদিক থেকে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত নেতৃত্ব পেতে পারেন সাকিব। এ ক্রিকেটারের শেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টও হতে পারে এটি। কারণ, তখন তাঁর বয়স ৩৮ বছর পেরোবে। তাই আশা করা যায় না, ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও খেলবেন তিনি।
সে যাই হোক, সাকিবকে অধিনায়ক করা হলে ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য লিটন কুমার দাস তৈরি হয়ে যাবেন। কারণ টেস্ট ও টি২০-এর মতো ওয়ানডে দলেও সহকারী অধিনায়ক হবেন তিনি। সব দিক বিবেচনা করে সাকিবকে অধিনায়কের প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিসিবি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়া, ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার সহকারী থাকা সাকিবকে মনোনীত করার চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কারণ, বিশ্বকাপে জাতীয় দলের ভালো বা খারাপ করার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে অপেক্ষাকৃত যোগ্য নেতার হাতে দল তুলে দেওয়ার ওপর। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকেই প্রথম পছন্দ। গতকাল কয়েকজন ক্রিকেটারের কাছে এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাওয়া হলে সাকিবকেই বেছে নিয়েছেন তারা।
এমআই