সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
সংবাদ প্রকাশের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক যায়যায় দিনের প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে বিধিবহির্ভূত বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কর্মরত সাংবাদিকরা।
রবিবার (০৬ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সম্মুখে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে অনতিবিলম্বে সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং ক্যাম্পাসে মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জোর দাবি তোলেন সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালেরকন্ঠ প্রতিনিধি ও ইবি প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'সংবাদ প্রকাশের জেরে বহিষ্কারের যে ঘটনা, তা সরকারের স্বাধীন গণমাধ্যম নীতির পরিপন্থী এবং একইসাথে মুক্ত সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়। কুবি উপাচার্য যে অন্যায় করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি দায়িত্বে থাকার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। তাকে অনতিবিলম্বে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।'
দৈনিক দেশ রূপান্তর প্রতিনিধি ও ইবি সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমানুল সোহান বলেন, 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিধিবহির্ভূত ভাবে সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কলমকে থামানোর চেষ্টা করেছেন। আমি তাকে বলতে চাই, সাংবাদিকদের কলমকে থামানোর চেষ্টা করলে সেটা কখনোই সম্ভব হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একমাত্র শত্রু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকেরা। আর সাংবাদিকরা যেহেতু শিক্ষার্থীও, তাই তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে। তাদের কলমকে থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব হবে না। কারণ সাংবাদিকরা বসে নেই। তারা সবসময় দূর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা যতই থামানোর চেষ্টা করবেন, আমদের কাজে তত বেশি গতি সঞ্চার হবে।'
ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শাহেদুল ইসলাম বলেন, 'ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে সবসময়ই দূর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি প্রোগ্রামে দুর্নীতিকে বৈধতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সবক দেওয়ার মতো একটা বক্তব্য দিয়েছেন। এভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে থাকা তার মতো লোকেরা মুখে প্রগতিশীলতার বুলি আওড়ান, কিন্তু আড়ালে দূর্নীতি করে যান। আমি সরকারের কাছে আহবান জানাই, যেন এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন দূর্নীতিবাজ লোকদের বসানো না হয়। এবং অনতিবিলম্বে ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানাই।'
প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধি ও ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু হুরাইরা বলেন, ' কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জঘন্যতম অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে তার প্রতিবাদে আগস্ট মাসে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাওয়া বক্তব্যকে কোট করে নিউজ করার কারণে রাগের বশীভূত হয়ে কোন প্রকার তদন্ত কমিটি ছাড়াই কুবি সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারর করে সংবিধান বহির্ভূত কাজ করেছেন উপাচার্য। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন। তিনি যে কাজ করেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল বলে আমরা মনে করি। তিনি এ কাজ করে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীন লেখনীকে বাধাগ্রস্থ করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কুবি উপাচার্যকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অতি শীঘ্রই উপাচার্যকে তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসে ইকবালের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার ও হলের আবাসিকতা ফিরিয়ে দিতে হবে।'
শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কুবি উপাচার্যকে পাঁচ দিনের আলটিমেটাম দেন তিনি। এবং এর মধ্যে যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে শনিবার থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও প্রদান করেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক নয়াদিগন্ত প্রতিনিধি তাজমুল জায়িম, ঢাকা পোস্ট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি রাকিব হোসেন, দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতিনিধি আজাহারুল ইসলাম, দৈনিক মানবকন্ঠ প্রতিনিধি রাকিব মিয়া রিফাত মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন।
সময় জার্নাল/এলআর