নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধে সর্বসাধারণের অবদানের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১৪ সালের ১৭ মে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুলনার ময়লামোতায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’।
২০১৫ সালের শেষের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সেন্ট্রাল রোডে একটি বাড়ি উপহার দেন ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর জন্য। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ২৬, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের এই নতুন ভবনে জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং ড. চৌধুরী শহীদ কাদের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ করে আসছেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অংশ গণহত্যা-নির্যাতনের দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য ছবি এবং ভাস্কর্য রয়েছে জাদুঘরে। এইসব নিদের্শন, ছবি এবং ভাস্কর্য একাত্তরের গণহত্যার চিত্র জীবন্ত আকারে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার চিত্র তুলে ধরতে জাদুঘরে রয়েছে প্রতীকি বধ্যভূমি। রয়েছে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র।
রয়েছে তাজউদ্দিন আহমেদ এর প্রিয়তমা স্ত্রী জোহুরা তাজউদ্দীকে যুদ্ধের সময় করণীয় সম্পর্কে লেখা সেই বিখ্যাত চিঠি-
‘‘ জোহুরা,
পারলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সাথে মিশে যেয়ো। ঐ মতো ব্যবস্তা (দুই)”
সিগারেটের প্যকেটে লিখে যাওয়া এই চিঠিটি জাদুঘরে রয়েছে।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লিখিত প্রেস রিলিস, ১৯৭২ সালে শহিদ পরিবারকে দেওয়া চেক, চিঠিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুষ্প্রাপ্য সব নথিপত্র ও নিদর্শন রয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণের সেই মাইকটি রয়েছে জাদুঘরে।
প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলে বয়লারের মধ্যে ঢুকিয়ে অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। একাত্তরের সেই গণহত্যার চিত্র তুলে ধরতে সেই বয়লারের অংশ রয়েছে জাদুঘরে। যথাযত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে গণহত্যায় শহিদদের দেহাবশেষ রয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাদের নির্যতনের চিত্র জীবন্ত আকারে তুলে ধরতে জাদুঘরে রয়েছে প্রতীকী টর্চার সেল।
পাকিস্তানি সেনারা বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের যানবাহন ব্যবহার করতেন। পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহার করা একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে।
প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যবহার করা দেশীয় অস্ত্রসহ অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরে থাকা দুষ্প্রাপ্য সব নিদর্শনের বিবরণ তুলে ধরতে গেলে কয়েকশ পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জাদুঘরের সকল নিদর্শন নিজ হাতে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে রেখেছেন, জাদুঘর পরিদর্শন করলে বুঝতে পারা যাবে একাত্তরের ভয়াভয় সেই চিত্র।
সময় জার্নাল/এমআই