সর্বশেষ সংবাদ
প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর:
সময় জার্নাল ডেস্ক: কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠেছে বাম তীরের ভাঙন। জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার ৪২ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ২০টি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে এক মাসে ঘর-বাড়ি, ভিটেমাটিসহ ফসলি জমি হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো প্রকল্প না থাকায় আগ্রাসী রূপ নিয়েছে তিস্তা।তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি, খিতাবখা, বুড়িরহাট ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, কালিরপাঠসহ কয়েকটি গ্রাম। অন্যদিকে উলিপুর উপজেলার বজরাসহ বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত রয়েছে ভাঙন। রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখা দরগারপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্রোতের তীব্রতায় প্রতিদিনই তিস্তার তীর ভাঙছে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন নদী তীরের বাসিন্দারা। ভাঙনের কবলে পড়ে গত তিনদিনে এ গ্রামের সাতটি বাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। কেটে ফেলা হয়েছে গাছপালাসহ বাঁশঝাড়। হুমকিতে রয়েছে আরো শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি।তিস্তা নদী ঘরের কাছে আসায় রোববার থেকে বাড়ি সরানোর কাজ করছেন সামছুদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, ‘রোববার দুটি ঘর সরিয়ে অন্যের জায়গায় রেখেছি। বাকি একটি ঘর ও রান্নাঘর গতকাল পার্শ্ববর্তী জায়গায় সরিয়ে নিয়েছি। যাওয়ার জায়গা নেই।’ এছাড়া বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন জিয়াউর রহমানসহ আরো কয়েকজন। নদীর তীর ঘেঁষে বসবাসকারী ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘নদী থেকে অনেকটা দূরে আমার বাড়ি ছিল। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে ভাঙন বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। আমার বাড়িতে ৩০ ফুট দৈর্ঘের একটি আধাপাকা ঘর রয়েছে। অন্য ঘর সরিয়ে নিলেও এ ঘর কীভাবে সরিয়ে নেব তা ভেবে পাচ্ছি না। জমিজমা যা ছিল সব নদীতে চলে গেছে। অনেকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজনকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ভাঙনে আমরা শেষ হয়ে গেলাম।’ অন্যদিকে শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তার তীর রক্ষায় নির্মিত কংক্রিটের ৬০ মিটার স্পারের মধ্যে ৩০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্শ্ববতী এলাকাগুলো। স্থানীয়রা জানায়, স্পারের বাকি অংশটুকু রক্ষা করা না গেলে উজানের ও ভাটির দিকের বুড়িরহাটসহ কয়েকটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানি কিছুটা কমলেও গতকাল বিকালেও তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি গতকাল থেকে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন খেত। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মুসার চরের জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের চরের প্রায় বাড়িতে ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা সমস্যায় পড়েছি। পানি আরো বাড়লে বাড়িতে থাকার উপায় থাকবে না।’ কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তার পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আগামী দুএকদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে। ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা থাকায় বড় কোনো প্রকল্প নেই। তিস্তাসহ ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের প্রায় ৪০টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে। ফলে শুধু জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সরানো হচ্ছে। পাশাপাশি বুড়িরহাট স্পারের বাকি অংশ রক্ষার চেষ্টা চলছে।’এদিকে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গতকাল সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অন্যদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যমুনার কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। ফলে নদী-তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যমুনা তীরবর্তী কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। পানি বাড়লেও ব্যাপক বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। জেলার শাহজাদপুর, সদর, চৌহালী ও কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের শাহাদৎ হোসেন, আল-আমিন শেখ, নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বন্যা আসার আগেই কয়েক দফায় যমুনায় পানি বেড়ে যায়। এতে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। নিচু জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়। এর সঙ্গে নদীভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের সুফিয়া খাতুন, মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ভাঙনে নদী-তীরবর্তী মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।’ সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তবে ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা নেই।সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যমুনায় পানি বাড়ায় কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে তা ব্যাপক হারে নয় বা ভয়ের কিছু নেই। ভাঙন স্থানে আমরা জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করছি।’অন্যদিকে রংপুরে উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে তা ধীরগতিতে। এখনো তিস্তা নদীর সংলগ্ন চরের নিম্নাঞ্চলের কোথাও কোথাও পানিতে তলিয়ে আছে।প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি বাদশাহ সৈকত, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি অশোক ব্যানার্জী ও রংপুর প্রতিনিধি এসএম পিয়াল এস.এম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল