শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

লাম্পট্য, ব্যভিচারে মহিমার কিছু নেই

সোমবার, মে ১৭, ২০২১
লাম্পট্য, ব্যভিচারে মহিমার কিছু নেই

ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন :

পেশাগত ও সামাজিক কাজে সমাজের 'অস্পৃশ্য' দুর্ভাগা নারীদের সাথে কথা বলতে ও শুনতে হয়েছে। একবার রাজবাড়ির গোয়ালন্দে। আরেকবার ময়মনসিংহ শহরের মাঝখানে, দুর্গাবাড়ি রোড আর স্বদেশী বাজারের মধ্যিখানের রহস্যময় এলাকায়। 

 দৌলতদিয়া ঘাটের পাশের ওই বৃত্তবন্দী নারীরাও আর সব নারীদের মতই একটা নিষ্পাপ শৈশব হয়তো পেরিয়ে এসেছে। মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনেছে, বাবার গলা জড়িয়ে কত আব্দার করেছে। হয়তো কাউকে ভালোবেসেছে। নিষ্ঠুর ভাগ্য ওদের এই আঁধার রাজ্যে টেনে এনেছে। 

রাতের আঁধারে যারা কাছের, দিনের আলোতে তারাই আবার অচ্ছুৎ! কথাগুলো ওদের। শহর ময়মনসিংহের ওই জায়গার মেয়েদের। একসময় বলা হতো 'রেড লাইট জোন'। কখনও বলা হতো নিষিদ্ধ পল্লী। 

স্যার, আমরা আছি বলেই আপনাদের ভদ্রসমাজের নারীরা ঘরে, অফিসে, রাস্তায় নিরাপদে চলতে ফিরতে পারছে। আমরা না থাকলে ভদ্রবেশি পুরুষগুলো জানোয়ার হয়ে ছিড়েখুঁড়ে ফেলতো। অথচ আপনারা আমাদের ঘেন্না করেন।। আমরা ক্যামনে বাচিঁ, অসুখে-বিসুখে চিকিৎসার কি সুযোগ পাই, অসুখবিসুখ থেকে বাঁচার উপকরণ কোথায় পাই, কেউ খোঁজ নেয়?

না, কেউ খোঁজ রাখে না। উঁচুতলার কিংবা রূপালী জগতের কারও সতের নম্বর প্রেমিককে নিয়ে কে কি মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খেলো, তা নিয়ে ঝলমলে স্টোরি মিডিয়ায় আসে। কিন্তু রোগশোকে অভাবে গোয়ালন্দ কিংবা ময়মনসিংহের সেই হতভাগ্য নারীরা খেতে পেলো কি না,  তা নিয়ে গল্প যাবে না। পাঠক-দর্শক খাবে না। 

কিভাবে কাটে এদের দিন আর রাতগুলো? প্রকৃতির নিয়মে দিনের পর রাত আসে সবার জন্য প্রশান্তি নিয়ে। ওদের রাত আসে নরক যন্ত্রণা হয়ে। দিন আসে, কিন্তু আঁধার কাটেনা। এভাবে কি বাঁচা যায়? 

অথচ এরা কেউ শখ করে এখানে আসে নি। ভদ্র সুশীল কোনো যুবকের ভালোবাসার মিথ্যে আশ্বাসে বিশ্বাস করে বিক্রি হয়ে কেউ এসেছিলো এই নরকে। কেউবা সংসারের অশান্তি আর চরম নির্যাতন থেকে বাঁচতে ক্ষণিকের ভুলে এই অন্ধকার জগতে ঠাঁই নিয়েছে। 

এদের নিকষ কালো আঁধার জীবনেও এরা পিদিমের আলো খুঁজে বেড়ায়। অমানুষদের মাঝে থেকেও এরা মনুষত্ব হারিয়ে ফেলেনি। তাই নিজের সম্মান বিক্রি করে কেউ পরিবারের জীবনরেখা বাঁচিয়ে রাখে। সবাই হয়তো জানে, গার্মেন্টসে কাজ করে মেয়ে টাকা পাঠাচ্ছে। ছুটি পায়না, তাই বাড়ি আসতে পারে না। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে সন্তানকে নিয়ে। বাড়তি নির্যাতন সয়ে এনজিওর স্কুলে পাঠায় ছেলেকে, মেয়েকেও। নিজের পঙ্কিল জীবন যেন ওদের ছুঁতে না পারে। বৈরী পরিবেশেও আশা নিয়ে বাঁচে। সাহসী হয় অনাগত সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়।

এদের এই সাহসিকতা নিয়ে সমাজের আলোকিত মানুষদের মুখে কথার ফুলঝুরি ছুটে না। কারণ এদেরকে উদ্ধার করা হয়ে গেছে আগেই। আগে ছিলো পতিতা, বেশ্যা। এখন ভদ্রগোছের নাম পেয়েছে। যৌনকর্মী।  আর কি লাগে? 

কত মিথ্যেকারের সাহসিকাদের জয়গান আমরা গাই মিডিয়াতে, সামাজিক মাধ্যমে। কে কত সাহসী হয়ে সংসার ছাড়লো। কতজন 'জাস্ট ফ্রেন্ড' এর সাথে পরে সম্পর্কে জড়িয়ে ঘনিষ্ঠ হলো। অন্তরঙ্গ ছবি-ভিডিও ভাইরাল হলো কতবার! ব্রেভগার্ল! বোল্ড! আলোকিত মানুষরা বাহবা দেই। 

মিডিয়ায় তাদের মহিমান্বিত করার কি প্রাণান্ত চেষ্টা!  

একজন পুরুষ কিংবা নারী ঘর বাঁধতে পারে, প্রয়োজনে সেই ঘর ভাংতেও পারে। আবার নতুন করে ঘর বাঁধতে পারে।  এটা খুব স্বাভাবিক। স্বপ্ন ভাংতে পারে। বিশ্বাসও।  

কিন্তু পেটের ক্ষুধা না থাকলেও 'মনের ক্ষুধায়' যারা বার বার 'মনের মানুষ' পাল্টায়, তাদের কাছে কি শিখবে তরুন প্রজন্ম?  এটা লাম্পট্য,  ব্যভিচার ছাড়া কিছু নয়।

আঁধার জগতের হতভাগ্য নারীদের সাহসিকতা নিয়ে নীরব আমাদের উঁচু তলার সমাজে, আর প্রগতির ধ্বজাধারী ঝলমলে মিডিয়ায় রূপালী জগতের বহুচারীদের নানা বানিজ্যিক স্ট্যান্টবাজি নিয়ে কত প্রশস্তি!  

ধর্মের কথা বাদ দিলাম, নৈতিকতার বিচারে লাম্পট্য আর ব্যভিচারে সত্যিকারের কোন মহিমা নেই।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল