এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট :
বাগেরহাটের মোংলা পৌর শহরে মালামাল উঠানো ঘাট শ্রমিকদের বিশ্রামের জায়গা রাতারাতি দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। টিটু মাঝি ওরফে গয়না টিটু নামে এক ব্যক্তি রাতের আঁধারে এই মার্কেট নির্মাণ করলেও স্থানীয় প্রশাসন জানেনা কিছুই। এনিয়ে বিক্ষোভ করে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানববন্ধন করে ঘাটের শ্রমিকরা। পৌর শহরের ১ নং জেটি সংলগ্ন বাজার ঘাটের ঘাট শ্রমিকদের জন্য ২০১৯ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি জায়গাটি উদ্ধোধন করে দুটি গাছ রোপন করেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী বেগম হাবিববুন নাহার।
এবিষয়ে রবিবার মোংলা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন মালামাল উঠানো ঘাটের শ্রমিকরা। অভিযোগে মোংলা উপজেলা ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সরদার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কাঁচামাল, সিমেন্ট, ইট, চাল, ডালসহ বিভিন্ন মালামাল উঠানোর জন্য ১ নং জেটিতে অবস্থিত এই বাজার ঘাট। শ্রমিকরা সে মালমাল উঠিয়ে মোংলা নদীর পাশে জেগে ওঠা চরে ছাউনি দিয়ে বিশ্রাম নিতেন। সরকারি এই জায়গায় শ্রমিকরা যাতে ভাল করে বিশ্রাম নিতে পারে সে জন্য ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এটি উদ্ধোধন করে এবং সেখানে বট গাছের দুটি চারা রোপন করেন।
গাছ দুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে শ্রমিকদের ওই চর পড়া জায়গায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভূমিদস্যু টিটু মাঝি ওরফে গয়না টিটুর। একপর্যায়ে গাছ দুটি কেটে সেই জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণ করে সে। সাধারণত মোংলা নদী ভরাট হয়ে চর পড়েছে। শ্রমিকদের নানা রকম ভয় দেখিয়ে সেই চর দখল করেছে টিটু মাঝি। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তির নজরে আসেনি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রবিবার সকালে ঘাটের প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক মানববন্ধন করে এবং গয়না টিটুর কেটে ফেলা গাছ দুটি নিয়ে থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে ওসি মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
এদিকে নদী পাড়ে চরের জায়গার মালিক উপজেলা ভূমি অফিসের। কিন্তু এই জায়গা দখল করে কিভাবে মার্কেট হলো তা জানেনা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, এই জায়গা কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে মার্কেট করার বিষয়ে প্রথম শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন এ ঘটনায় সদর তহশীলদারকে (নায়েব) সরেজমিনে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের একজন উপ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের উদ্বোধন করা ঘাট শ্রমিকদের বিশ্রামের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গয়না টিটুর ভাষ্য, তিনি এ জায়গা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে মার্কেট করেছেন।
প্রতিদিন এরকম হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ে উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) শাহিনুর আলম বলেন, আবেদন করলেই জায়গা পাওয়া যায় না। আবেদন অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সেটি অবৈধ জায়গা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, 'যে কোন গাছ কাটা পরিবেশের জন্য হুমকি। আমার লাগানো গাছ এবং শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য দেয়া জায়গা কিভাবে দখল করে মার্কেট হলো সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
জানা যায়, গেলো তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে অবৈধ দখল ও স্থাপনার দায়ে স্থানীয় প্রশাসন মোংলা নদী পাড়ে বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এসময় অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ নেওয়া কিছু স্থাপনাও ভাংচুর করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর পর আবার নদী পাড়ের সে জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে ঘট শ্রমিকরা জানায়।
এমআই