মোঃ আবদুল্যাহ চৌধুরী, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মিরা। তাদের অভিযোগ, বিবাহিত, প্রবাসী, চাকরীজীবী, অযোগ্য ও নিস্ক্রিয়দের নিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত শনিবার (১২ আগস্ট) কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে একই কমিটির ৬জন যুগ্ম-আহ্বায়ক জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির ২১ সদস্যের মধ্যে সদস্য সচিবসহ ১৭জন অনাস্থা জানায়। আহ্বায়ক কমিটির বয়স ১ বছর ৭ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটির পরিচিত সভা ও অধীনস্থ কোনো ইউনিয়নে সাংগঠনিক সভা ও মতবিনিময় সভা করার কোন সামর্থ্য রাখে নাই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহসিন রিয়াজকে আহ্বায়ক ও মো.ইয়াছিন ফরহাদকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল জেলা ছাত্রদল।
নতুন কমিটিতে ত্যাগী নেতা-কর্মিরা পদবঞ্চিত হয়েছেন—এ অভিযোগ তুলে অনাস্থা দেন একই কমিটির ১৭ জন নেতা। এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে প্রবাসী ৪জন, বিবাহিত ৩জন, চাকরিজীবি ৪জন, অপরিচিত ১জন, ডাবল নাম রাখা হয়েছে ২জনের।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এ আহ্বায়ক কমিটিকে অযোগ্য ঘোষণা করে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হোক।
কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইয়াছিন ফরহাদ বলেন,যাকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে সে মূলত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিল। সে একজন চাকরিজীবি তাকে ওখান থেকে এনে ছাত্রদলের এ কমিটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। তখন আমরা এক ধরনের অনাস্থা ও সাংগঠনিক কাঠামোতে থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। অনেকে গণহারে পদত্যাগ করেছে। আমি চেয়েছি আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে জিনিস গুলো যেন নিরসন করে দেয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ বলেন, আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তিন মাসের মধ্যে নতুন করে একটি কমিটি দেওয়া হবে। এ কমিটির অনেকে বিদেশে অবস্থান করতেছে,অনেকে চাকরি করতেছে। অনেকে ৩-৪ বছর ছাত্রদলের কার্যক্রমের সাথে নেই। ওদেরকে এনে এখানে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য করেছে। এ কমিটি একেবারে উপজেলা কমিটির পর্যায়ের মানের হয়নি। যারা আমাদের সাথে মাঠের রাজনীতি করে ওদের অনেকের নামটা এ কমিটিতে নেই। এ কমিটিতে মো.বাশার রানা স্বপন নামে অজ্ঞাত একজনকে ও রাখা হয়েছে। যে নামে এ উপজেলায় কোনো ছাত্রদল নেতা নেই।
ফরহাদ আরও বলেন, আমি চেয়েছি বাকী যুগ্ম আহ্বায়কদেরকে নিয়ে বসে ইউনিয়ন কমিটি গুলো করার জন্য। কিন্ত আমার আহ্বায়ক ঊনি চায় ইউনিয়ন কমিটি গুলোতে ঊনি একজন নিবে আমি একজন নিব।
এভাবে কমিটি করার পক্ষে আমি ছিলাম না। যদিও আমার কাঁধেও দায় আসতেছে। আমরা ইউনিয়ন কমিটি গুলো করিনি। ইউনিয়ন কমিটি করতে পারিনি। আহ্বায়কের এক ঘেয়ামি,স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। ও চাই ভাগাভাগি। দুইজনের সাইনিং ক্ষমতা দুইজনেই কমিটি নেব। আমাদের এ বিষয় গুলো আমাদের উপজেলা বিএনপিও অবগত। এ অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমরা জেলা ছাত্রদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ পর্যন্ত যোগাযোগ করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহসিন রিয়াজ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, আমাদের এ কমিটি দেওয়ার পর থেকে সাংগঠনিক কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে যত কর্মসূচি আছে আমি আমার সদস্য সচিবসহ এবং যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে কাজ করেছি।
যারা অভিযোগ গুলো দিয়েছে তারা ওই সময় পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগ করে তারা ফেসবুকে ছেড়েছে। এখন পর্যন্ত তারা পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করে নাই। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জেলা ছাত্রদলের নির্দেশে উপজেলা বিএনপির সাথে সমন্বয় করে রীতিমত চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা ইউনিয়ন ছাত্রদলের নতুন কমিটি করার জন্য প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজগর উদ্দিন দুখু বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। বর্তমান কমিটি যদি কোন কাজ করতে না পারে, তাহলে আমাদের সাংগঠনিক মনিটরিং টিম আছে, সাংগঠনিক সিস্টেম আছে, আমরা সেটার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
সময় জার্নাল/এলআর