শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইবিতে নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ প্রদান, তদন্তে কমিটি

রোববার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
ইবিতে নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ প্রদান, তদন্তে কমিটি

সাইফ ইব্রাহীম, ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পরিচিতি পর্ব ও শৃঙ্খলা শেখানোর নামে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। 

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় এ র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

অভিযোগপত্রে নাম উঠে আসা অভিযুক্তরা হলেন  মিজানুর ইমন, পুলক, আকিব, শুভ ও সাকিব। 
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত ২ সেপ্টেম্বর ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর অভিযুক্তরা তাকে জিমনেসিয়ামের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে পরিচিত হওয়া এবং আদব-কায়দা শেখানোর নামে অভিযুক্তরা তার সাথে নানাভাবে খারাপ ব্যবহার করেন। ওইদিনের পরিচয় গ্রহণ শেষে অভিযুক্তরা তাকে সন্ধ্যা ৭টায় পুনরায় একই স্থানে আসার জন্য বলেন। এবং না আসলে আলাদাভাবে রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী সেখানে গেলে আবার আদব-কায়দা শেখাতে শুরু করেন অভিযুক্তরা। শেখানো পদ্ধতি থেকে একটু ভুল হলেই বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে উল্লাস করার ভঙ্গিতে সবার সামনে নিজেকে খারাপ ভাষায় উপস্থাপনে তাকে বাধ্য করা হয়। এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দেখাতে বলা হলে ভুক্তভোগী তাতে অসম্মতি জানালে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়। এছাড়াও পরবর্তী সময়ে কথা না শুনলে ব্যাচ আউট করা ও বিভাগের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। 

এসব ঘটনার পর ভুক্তভোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, 'অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ভার্সিটির প্রথম দিনেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের শেখানো পদ্ধতি থেকে হালকা একটু ভুল হলেই তারা আমাকে নানাভাবে গালমন্দ করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে মানসিকভাবে হয়রানি করেছে। এসব ঘটনার পর আমি ওইসময় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিনি। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থীর সাথে যেন এমন কোনো ঘটনা না ঘটে।'

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কয়েকজন অভিযুক্তের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। 

এর আগে ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী তার পরিবারকে জানালে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ জানিয়ে একটি মেইল করেন। পরে গতকাল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে ছেলেকে দিয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছেলের বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, 'আমার ছেলের সাথে যা ঘটেছে তা নিয়ে পরিবারের সবাই চিন্তায় ছিলাম। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি এবং এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। তারা এমন খারাপ খারাপ ভাষায় আমার ছেলেকে র‍্যাগিং করেছে, যেগুলো সভ্য সমাজে কোনোভাবেই যায় না। মুখে নিতেও লজ্জা হয়। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিক যাতে পরবর্তীতে তারা আর এমন কিছু করার সাহস না পায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি আমার সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। থাকে ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে, তাকে দেখাশোনা করারও কেউ নেই। তার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।'

এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান, ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মিথুন বৈরাগী এবং একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খান। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ 

তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমি বিষয়টা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে এখনও চিঠি পৌঁছায়নি। সম্ভবত সকালের মধ্যেই পেয়ে যাবো। চিঠি পেলে তখন আমরা পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।'

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অনুরোধে তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হলে অস্থায়ীভাবে কিছুদিন রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।'

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল