সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল ডেস্ক: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন এই চার মূলনীতির ওপর বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত বলে জানানো হয়েছে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক বিষয়ক যৌথ ঘোষণায়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠক বিষয়ক যৌথ ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। ইংরেজিতে প্রচারিত ওই ঘোষণায় বলা হয়, বিশ্বের যে কোনো দেশে অসাংবিধানিক পরিবর্তন এবং বেআইনি সামরিক হস্তক্ষেপের নিন্দা করে দুই দেশ। ঘোষণায় জানানো হয়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানুষের স্বার্থে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ। সহনশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্ব; কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অংশীদারিত্ব এবং নাগরিক সমাজের মাধ্যমে জনগণকেন্দ্রিক সংযোগের জন্য অংশীদারিত্ব–- মোটা দাগে এই ৩ পয়েন্টে যৌথ ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অংশীদারিত্ব অংশে বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে। বিশেষ করে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের নীতি এবং বহুপাক্ষিকতাবাদে অবিচল বিশ্বাসকে তুলে ধরা হয়। সে ক্ষেত্রে দুই দেশ সকল জাতির আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। বৈঠকে দুই নেতা ইউক্রেনের যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন মনে করেন। বিশেষ করে এ যুদ্ধ জাতিসংঘের সনদের বরখেলাপ এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুতর হুমকি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন জাতিসংঘের সনদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রচেষ্টায় তাদের আগাম সমর্থন ব্যক্ত করেন। যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী কার্যক্রমের ব্যাপক প্রশংসা করা হয়েছে ফ্রান্সের তরফে। তাতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে টেকসই প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে ফ্রান্স। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার মামলায় অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করে দেশটি। সংঘাত, সহিংসতা এবং নৃশংস অপরাধের কারণে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জরুরি এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার ঢাকা সফরে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহযোগিতায় ১০ লাখ ইউরোর ঘোষণা করেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ হিসাবে, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিকের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করে। উভয় দেশই এই অঞ্চলটিকে অবৈধ নৌযান, অবৈধ মাছ ধরার বিপক্ষে এবং বাণিজ্য ও নৌ চলাচলের স্বাধীনতার পক্ষে মুক্ত রাখতে অভিন্ন প্রচেষ্টা প্রকাশ করে। ২০২১ সালের দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে সই করা সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে এতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন দুই নেতা। বাংলাদেশের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের সমর্থনে সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ নৌ, বিমান এবং সেনা সদস্যদের সক্ষমতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। উভয় দেশই অপ্রচলিত নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়। সহনশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্ব অংশে চলিত বছর দুবাইয়ে কপ-২৮ এ ফলাফল ভিত্তিক প্রচেষ্টা নিশ্চিতে সম্মত হয় দুই দেশ। ফ্রান্স ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করে। আর বাংলাদেশ সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থ ও প্রযুক্তির বিনিময়ে মাধ্যমে জ্বালানি পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য একটি টেকসই সহযোগিতামূলক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়। নাগরিক সমাজের মাধ্যমে জনগণকেন্দ্রিক সংযোগের জন্য অংশীদারিত্ব অংশে দুই দেশ সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়। বলা হয়, শক্তিশালী, পুনর্নবীকরণ জনকেন্দ্রিক সংযোগ স্থাপনের জন্য সংস্কৃতিকে একটি প্রধান সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে ঢাকা ও প্যারিস। তারা প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অনন্য মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য খনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স তাদের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। এ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করার উপায় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান গভর্নেন্সে একজন ফরাসি সমুদ্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ মোতায়েনের কথা জানায়, যা স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স তাদের অংশীদারিত্বের কৌশলগত মাত্রা আরও গভীর করতে নিয়মিত উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। সময় জার্নাল/এস.এম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল