ডাঃ নুসরাত সুলতানা :
প্রায়শই কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সম্প্রতি ইউকে এর “জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমিউনাইজেশন” কিছু তথ্য লিফলেট আকারে প্রকাশ করেছে যা ১৪ মে, ২০২১ এ হালনাগাদ করা হয়েছে।
প্রশ্ন-১- গর্ভবতীরা কি ভ্যাক্সিন নিতে পারবেন?
কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন অন্য সকলের মত গর্ভবতীদের দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে ভ্যাক্সিন নেবেন নাকি নেবেননা তা তাদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে কারন এখন পর্যন্ত গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের উপর তথ্য খুব সীমিত।
গর্ভবতীদের মধ্যে কারা ভ্যাক্সিন নিতে পারেন?
১। যাদের উচ্চ ঝুকিপূর্ণ অবস্থা যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এজমা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে যাতে মারাত্মক কোভিড আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
২। স্বাস্থ্য ও সমাজসেবাকর্মী
৩। যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে এবং স্থুলকায় (বিএমআই ৪০ এর উপরে)
৪। যাদের বয়স ৩৫ বা তদূর্ধ্ব।
গর্ভবতীদের ভ্যাক্সিনেশনের উপকারিতাঃ
১। কোভিড-১৯ গর্ভকালে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ, বিশেষ করে গর্ভের শেষ তিনমাসে। গবেষনায় দেখা গেছে, শেষ তিন মাসে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে সময়ের পূর্বে শিশুর জন্ম হয় (Premature Birth), ফলে নবজাতক উচ্চ ঝুঁকিতে পড়ে।এছাড়া একজন গর্ভবতী যার কোমর্বিডিটি আছে, তিনি গর্ভের যে কোন সময়ে মারাত্মক কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। ভ্যাক্সিন নিলে তারা সুরক্ষা পাবেন।
২। কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনে জীবিত ভাইরাস থাকেনা অথবা এমন কোন উপাদান থাকেনা যা গর্ভবতী বা গর্ভস্ত শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
গর্ভবতীদের ভ্যাক্সিনেশনের ঝুঁকিঃ
১। গর্ভবতীদের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য প্রমাণ সীমিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে একলক্ষের বেশি গর্ভবতী মডার্না/ ফাইজার ভ্যাক্সিনসেবনকারীদের পর্যবেক্ষন করে কোন প্রকার নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেনি। ভবিষ্যতে আরো গবেষনালব্ধ ফলাফলে হয়তোবা আমরা আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো।
২। ভ্যাক্সিনের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
৩। অক্সফোর্ড একটি বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে রক্ত জমাট বাধা।
গর্ভকালের কোন সময়ে ভ্যাক্সিন নেয়া যাবে?
গর্ভকালীন যে কোন সময়ে ভ্যাক্সিন নেয়া যাবে। এতে কোন জীবিত ভাইরাস থাকেনা তাই গর্ভস্ত শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওার আশংকা নেই। যেহেতু গর্ভকালীন প্রথম তিনমাস ভ্রুণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরী হয় তাই অনেকে ১৩ সপ্তাহের পর ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ নেয়ার বিষয়টি ভাবতে পারেন। তবে “জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমিউনাইজেশন” মনে করে ভ্যাক্সিনেশনের আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার ও প্রয়োজন নেই।
নিম্নের তথ্যগুলো ভ্যাক্সিনেশনের ব্যপারে গর্ভবতীদের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ করে দিতে পারেঃ
গর্ভবতী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেনঃ
১। যদি তিনি বা তার বাসার কোন সদস্য স্বাস্থ্যসেবা বা সমাজসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট হন।
২। যদি বাসার বাইরেও কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
৩। যদি পরিবারে সদস্য সংখ্যা অনেক বেশী হয় বা ছোট বাসায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়
৪। যদি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন হয়।
কখন একজন গর্ভবতীর মারাত্মক কোভিড হতে পারে, যদি
১। তার কো- মরবিডিটি থাকে
২। তিনি স্থুলকায় হন
৩। বয়স ৩৫ এর বেশী হয়।
৪। গর্ভের ২৮ সপ্তাহের পর আক্রান্ত হন।
প্রশ্ন-২- দুগ্ধদানকারি মা কি ভ্যাক্সিন নিতে পারবেন।
উঃ পারবেন।
প্রশ্ন-৩- যারা বাচ্চা নেয়ার প্ল্যান করছেন তারা কি ভ্যক্সিন নিতে পারবেন? ভ্যাক্সিনেশন কি গর্ভধারনে বাধা প্রদান করবে?
উঃ হ্যাঁ নিতে পারবেন। ভ্যাক্সিনেশন গর্ভধারনে বাধা প্রদান করবে, এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন-৪- পিরিয়ড বা মাসিকের সময় ভ্যাক্সিন নেয়া যাবে?
উঃ অবশ্যই যাবে।
লেখক : ডাঃ নুসরাত সুলতানা
সহকারী অধ্যাপক
ভাইরোলজী বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ