শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্রলীগের সম্মেলন : আলোচনায় অছাত্র, ড্রপ আউটসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরা

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
ছাত্রলীগের সম্মেলন : আলোচনায় অছাত্র, ড্রপ আউটসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরা

জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :

অর্ধযুগ  পর রাবি শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। এর আগে গেল বছরের ১২ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। দীর্ঘদিন পর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরেছে চাঞ্চল্যতা।  প্রার্থীতার জানান দিতে ক্যাম্পাসে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর পাশাপাশি মিছিল, মিটিং, শোডাউনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় যারা এগিয়ে তাদের সিংহভাগের নামেই রয়েছে চাঁদাবাজি, সিটবাণিজ্য, মাদক কারবারি, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টিসহ নানান অভিযোগ। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছে ড্রপ আউট, অছাত্র। আবার গত প্রায় দুই দশক ধরে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ দখল করে আছেন ‘স্থানীয়’ নেতারা। ফলে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ‘স্থানীয় বলয়’ একটি বড় বাধা মনে করছেন নেতারা।

ক্যাম্পাস ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব, সাগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য সাকিবুল ইসলাম বাকি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুলের নাম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা এসব নেতাদের মধ্যে সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে পড়াশুনা শেষ করেছেন। তিনি ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কাজী লিংকন ২০১৬ সালে অনার্স এবং ২০১৭ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করি। বর্তমানে মার্কেটিং বিভাগের একটি সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছি। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় একটি অচলাবস্থা তৈরী হয়েছিল। সেই দাবিতে বিভিন্ন সময় কথা বলাকে কেউ যদি দলীয় কোন্দল সৃষ্টি বলে তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ 

উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয়। এই বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেছেন তিনি। কিন্তু ছাত্রত্ব ধরে রাখতে এখনো মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। তার বিরুদ্ধে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী রাজনীতি করে সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ ও গরীব-অসহায়দের আর্থিক সাহায্য করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজ ইমেজ তৈরির চেষ্টা করছেন। ক্যাম্পাসে প্রচার আছে রংপুর বিভাগ থেকে এবার রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে একজন আসতে পারে। সেই বিবেচনায় অনেকটাই এগিয়ে দূর্জয়। এ বিষয়ে দূর্জয় বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিকদের হাতে রাবির নেতৃত্ব আসবে বলে বিশ্বাস করি। হলের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করব। সিট বাণিজ্যের যে অভিযোগ রয়েছে সেটা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণে সচেতন শিক্ষার্থীদের এবং ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চেষ্টা করে যাব’

বর্তমান কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। বর্তমানে তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সান্ধকালীন কোর্সে ভর্তি রয়েছেন বলে জানান। ২০১৮ সালে বিশ্নবিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে মাদক সেবনের অভিযোগ এনে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছিল তার বিরুদ্ধে। 

এদিকে ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সিট বানিজ্য, দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে ও  কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে নাফিউল ইসলাম জীবন নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে মিশু বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। যদি কেউ সেটা করে থাকে তাহলে সেটা আমার নাম ভাঙিয়ে করেছে।’

ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন। ২০১৬ সালে অনার্স এবং ২০১৮ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনিও ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের জার্মান ভাষার শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সংগঠনে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে গ্রুপিং নয় আমি সবসময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে থেকেছি। তবে সম্মেলনের দাবিতে আমরা অনেকেই কথা বলেছি।’ 

আলোচনায় থাকা আরেক পদ প্রত্যাশী গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু  কিছু সময় ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগে থেকে ক্যাম্পাসে তার সরব উপস্তিতি লক্ষণীয়। শিক্ষার্থী বান্ধব ছাত্রনেতা হিসেবে ক্যাম্পাসে তার পরিচিতি রয়েছে। 

স্থানীয় বলয়

বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫ টি কমিটি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কমিটিতেই একজন রাজশাহীর স্থানীয় এবং একজনকে রাজশাহীর বাইরে থেকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে এ শাখার নেতৃত্ব ক্রমেই রাজশাহী বিভাগেই আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া গত প্রায় দুই যুগে রাবি ছাত্রলীগের তিনটি কমিটির শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার প্রার্থীরা।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর বাড়ি নগরীর নওহাটা এলাকায়। এর আগে, গত ২০১৫ সালের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক কাজলার খালিদ হাসান বিপ্লব। ২০১৩ সালের কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান রানার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাগমারা ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের বাড়ি বাঘা উপজেলায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক পদপ্রত্যাশী জানান, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কেবল রাজশাহীর স্থানীয়রাই আসে। বাইরের যোগ্য প্রার্থী থাকলেও তারা মূল্যায়িত হচ্ছে না। অথচ সংগঠনের জন্য তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। তারপরেও কেবল স্থানীয়দেরই মূল্যায়ণ যেন একটি অলিখিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রনেতারা অভিযোগ করে বলেন, নিজের প্রয়োজনে স্থানীয় নেতা ক্যাম্পাস নেতৃত্বকে হাতে রাখে। স্থানীয় নেতা ক্যাম্পাস কমিটিকে একটি পকেট কমিটি তৈরি করেছে। 

বর্তমান নতুন সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার, সাগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য সাকিবুল ইসলাম বাকি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুলের নাম রয়েছে। 

এছাড়া রাজশাহীর বাইরে থেকে আলোচনায় বর্তমান কমিটির সহ- সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব রয়েছেন আলোচনায়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্তের আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। প্রায় সপ্তাহ না যেতেই আরেক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। শীর্ষ দুই পদের জন্য ৯৪ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। যার মধ্যে সভাপতি পদে ২২জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭২ জন পদ প্রত্যাশী সিভি জমা দিয়েছেন।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল