মোঃ শামীম হোসাইন:
পিরোজপুর জেলার নদীমাতৃক বাহন হিসেবে একসময় কাঠের তৈরি নৌকা ও ট্রলারের প্রচলন থাকলেও এখন স্টিলের তৈরি লঞ্চ, ট্রলার ও কার্গোর প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নৌযান তৈরিতে উপজেলা স্বরূপকাঠি এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ডকইয়ার্ড। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন পেশায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের। কিন্তু বর্তমানে নৌযান নির্মাণে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে কমে গেছে নতুন নৌযান তৈরি ও সংস্কার। বেকার হয়েছেন বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার শ্রমিক।
শিল্পসমৃদ্ধ এলাকাটি ঘুরে জানা যায়, জাহাজ নির্মাণ শিল্প বৃদ্ধিতে উপজেলার স্বরূপকাঠি, তারাবুনিয়া, নাওয়ারা, কালীবাড়ী, বরছাকাঠি, ডুবিহাট ও বালিহারিতে ছোট-বড় শতাধিক ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত এসব ডকইয়ার্ডে বিভিন্ন পেশার প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দৈনিক ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি ছাড়াও রয়েছে ওভারটাইম। বর্তমানে নৌযান নির্মাণের প্লেট, ঝালাইকাঠি ও রঙসহ নানা ধরনের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন নৌযান তৈরির ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। আর এ কারণেই ডকইয়ার্ডগুলোতে নৌযান মেরামতের কাজ এবং নতুন নির্মাণ কমে গেছে। ফলে এই এলাকার ডকইয়ার্ড শিল্পের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
শ্রমিক আলামিন জানান, আগে এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে শ্রমিকদের দিনে কাজ করার পরেও রাতে ওভারটাইম করতে হতো। ইদানীং জাহাজ নির্মাণ ও সংস্কার কমে যাওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা কমে গেছে, বেতনও কমেছে। অনেক ডকইয়ার্ডে কাজ না থাকায় বেকার হয়েছেন অনেকে।
হাওলাদার ডকইয়ার্ডের কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর হাওলাদার জানান, জাহাজ তৈরির প্লেটসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং জাহাজ নির্মাণ বা সংস্কারে মালিকদের আগ্রহ কমে গেছে। পূর্বের ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার প্রতি টন প্লেট ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। শুধু ডকইয়ার্ডেই নয়, এ শিল্পকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, হার্ডওয়্যার, রঙ ও মেশিনারি দোকান গড়ে উঠেছে। সেখানেও বহু শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
হলেও এখন কাজ কম থাকায় অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করতে হয়েছে। আগে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রঙ কেনা হতো। মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ কমে যাওয়ায় প্রতি মাসে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা কেনা হচ্ছে।
ছালেহীয়া ডকইয়ার্ডের পরিচালক নূর এ কাওসার বাবু জানান, আগে ডকে নতুন জাহাজ নির্মাণ ও পুরোনোগুলো সংস্কারের জন্য জায়গা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। আর এখন নির্মাণ কমে যাওয়ায় বহু জায়গা খালি পড়ে থাকে। কাজ না থাকায় শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
অগ্রগতি ডকইয়ার্ড শিপ বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী সেলিম হাসান জানান, তার ঢাকার কেরানীগঞ্জে ও স্বরূপকাঠির নাওয়ারায় দুটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। ডক দুটিতে প্রায় ৩০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। চট্টগ্রামের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী স্ক্রাপ, প্লেট, অ্যাঙ্গেল ও ঝালাইকাঠির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দামবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ ও সংস্কার কমে গেছে।
নেছারাবাদ ইউএনও মাহবুব উল্লাহ মজুমদার জানান, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের উদ্যোগে এই জাহাজ তৈরি ও সংস্কার ব্যবসা চালু করেছেন। এ শিল্প হতে পারে কোটি কোটি টাকা আয়ের উৎস। পাশাপাশি হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এর মাধ্যমে খুলে যেতে পারে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার।
এমআই