বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনিচ্ছিত কার্পেটিং শ্রমিক শরিফুলের

রোববার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনিচ্ছিত কার্পেটিং শ্রমিক শরিফুলের

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলেও ভর্তি অনিচ্ছিত হয়ে পড়েছে সড়কের কার্পেটিং শ্রমিক শরিফুল ইসলামের।

অদম্য মেধাবী শরিফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের ভাতিটারী গ্রামের পঙ্গু প্রতিবন্ধি রুহুল আমিনের ছেলে।

জানা গেছে, উপজেলার ভেলাবাড়ি ভাতিটারী গ্রামের পঙ্গু প্রতিবন্ধি রুহুল আমিন সেফালী দম্পতির ৪ ছেলে মেয়েই মেধাবী। রুহুল আমিন দিনমজুরী আর  সেফালী বেগম কার্পেটিংয়ের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলত তাদের সংসার।

এরই মধ্যে ৮ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরন করেন রুহুল আমিন। সেফালী বেগমের একার আয়ে সংসার চালানো দুস্কর হয়ে পড়ে।

অসুস্থ্য বাবার চিকিৎসা আর সংসার খরচ যোগাতে মায়ের সাথে কার্পেটিং কাজে যোগদেন দুই ছেলে সোহেল রানা আর শরিফুল ইসলাম। কাজের ফাকে লেখাপড়া চালিয়ে যান শরিফুল ইসলাম।  কিছু দিন ধরে মা সেফালী বেগমের শরীরে আলসার নামক রোগ বাসা বাঁধে। কাজ ছেড়ে দেন তিনি। ছেলেদের আয়ে চলছে সংসার।

প্রাথমিক থেকে অত্যান্ত মেধাবী শরিফুল ইসলাম কাজের ফাঁকে লেখাপড়া করে স্থানীয় হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে জিপিএ -৪.২৮ নিয়ে এসএসসি পাশ করে সবাই তাক লাগিয়ে দেন। ২০২২ সালে বেগম কামরুন নেছা ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৭৫ পয়েন্ট পান কাপর্পেটিং শ্রমিক শরিফুল ইসলাম।

অভাব নামক দানবের সাথে নিত্য লড়াই করে চলা অদম্য মেধাবী শরিফুল ইসলাম অর্থের কাছে হেরে যেতে নারাজ। জীবনের লক্ষ্য পুরনে বধ্য পরিকর শরিফুল লেখাপড়া করে এডমিন ক্যাডার হতে চান। দেশের সেবায় নিজেকে নিয়জিত করতে চান। এসএসসি পরীক্ষার ফরমপুরনের টাকাও নিতে হয়েছে ঋণ করে। যা পরীক্ষা শেষে কাজ করে পরিশোধ করেন তিনি। এই অবস্থা এইচএসসিতেও।

অর্থের অভাবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে অংশ নিয়ে শরিফুল ইসলাম সংস্কৃত বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও ভর্তি হওয়ার মত টাকা নেই শরিফুল বা পরিবারের কাছে। বড় ভাই সোহেল রানার কার্পেটিংয়ের কাজের আয়ে চলা এ সংসার থেকে মা বাবার চিকিৎসা, ছোট দুই বোনের লেখাপড়া খরচ যোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। তার পক্ষে শরিফুলকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানো অসম্ভব।

ফলে অনিচ্ছিত হয়ে পড়েছে শরিফুলের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আর পড়া লেখা করা। সেখানে ভর্তি হলে একদিকে  সংসারে আয় কমে যাবে অন্যদিকে  শরিফুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ দিতে হবে। যা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

অভাব নামক দানবের কাছে হারতে নারাজ জেদি শরিফুল যেকোন মুল্যে পড়তে চান, ভর্তি হতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেভাবেই হোক এডমিন ক্যাডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশবাসীর সেবা করতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা দাবি করেন শরিফুল।

স্বপ্ন পুরনে সময় কমে আসলে হতাশ হয়ে পড়েন শরিফুল। ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে ভর্তি হতে হবে। নয়তো সুযোগ হাতছাড়া হবে। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবেশির কাছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে ভর্তির ঋণ পরিশোধ আর পরবর্তি খরচ যোগানো নিয়ে বড্ড চিন্তিত তিনি।

শরিফুলের মা বলেন, এক সময় কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়ার টাকা দিতাম। এখন আমিই ওষুধের জন্য চেয়ে থাকি ছেলের দিকে। শরিফুল ক্যাডার অফিসার হতে চায়। কোথায় পাবে এত টাকা?  কে দিবে তাকে এত টাকা। সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা দাবি করেন তিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশি সরকারী আদিতমারী কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কেরামত আলী শাহিন বলেন, অদম্য মেধাবী শরিফুলের লেখাপড়ায় প্রায় সময় সহায়তা করেছি। সে অত্যান্ত জেদি ও মেধাবী ছাত্র। তাকে সহায়তা করলে সে তার স্বপ্ন পুরন করতে পারবে। তাই সহায়তার হাত বাড়াতে সমাজের বিত্তবানদের আহবান জানান তিনি। 

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল