নিজস্ব প্রতিবদেক: “মুজিব’স বাংলাদেশ”-এর চলমান উদযাপনের সাথে সঙ্গতি রেখে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-এ, শুরু হল ১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার এবং প্রথম বাংলাদেশ ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট সামিট ২০২৩। এটিএফ ঢাকা ইতিমধ্যেই পর্যটন জগত এবং এশিয়ার ভ্রমণ ক্যালেন্ডারে একটি অন্যতম প্রধান জায়গা অর্জন করে নিয়েছে এবং গত নয় বছরে এই অঞ্চলের ভ্রমণপিপাসু মানুষ, শিল্প ও পর্যটন পেশাদারদের একত্রিত হওয়ার জন্য একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এটিএফ-এর আয়োজক পর্যটন বিচিত্রা। এবছর এটিএফ ১০ম বার্ষিকী উদযাপন করার কারণে আরও আকর্ষণীয় হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মেলা চলবে ২১ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, কিন্তু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করলে ছাত্রছাত্রীদের কোনও প্রবেশ মূল্য লাগবে না। তবে প্রবেশ টিকিটের বিপরীতে সবার জন্য রয়েছে র্যাফেল ড্র এবং এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর জন্য আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার পুরস্কার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলি, এম পি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন চেয়ারম্যান মো: রাহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান (সিনিয়র সেক্রেটারি) লোকমান হোসেন মিয়াঁ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান। নেপাল, চিন, এবং শ্রীলঙ্কার দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও।
প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলি, এম পি, এম পি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বলেন “গত দশ বছর ধরে পর্যটন বিচিত্রা এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-এর মাধ্যমে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে, বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে তার এক গভীর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর পর্যটন আকাশে উজ্জ্বল তারা হিসেবে ফুটে ওঠার জন্য নানা প্রকল্প নিয়েছে, মাস্টার প্ল্যান তৈরী করা হয়েছে, আমরা আশাবাদী।“
বিশেষ অতিথি মোকাম্মেল হোসেন, সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বলেন “সরকার ও মন্ত্রনালয়ের কাজ হছে সুযোগ করে দেওয়া। আর বেসরকারি উদ্যোগরা যদি সেই সুযোগকে সুন্দর ভাবে কাজে লাগায়, তাহলে অনেক কিছু সম্ভব। পথে বাধা আসবেই, সেই ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয় সদা সজাগ এবং তা অতিক্রম করতে তৎপর।“
লোকমান হোসেন মিয়াঁ, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান (সিনিয়র সেক্রেটারি), বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বলেন, “বাংলাদেশে পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ করার জন্য যা লাগবে, তার পরিকাঠামো তৈরী করতে আমরা প্রস্তুত। পর্যটনে যাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আসে সেই উদ্দ্যেশ্যে আমরা সবাই একসাথে কাজ করব এবং এই মেলায় আমাদের সক্রিয় যোগদান সেটাকেই প্রমাণ করছে। “
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত ও বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশ হতে পারে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য। এজন্য দরকার যথাযথ পদক্ষেপ সমন্বিত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা। এটিএফ ঢাকা সেই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। প্রতি বছর ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (এনটিও), ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (ডিএমসি), এয়ারলাইন্স, ক্রুজলাইন্স, বিদেশী দূতাবাস এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ভ্রমণ অ্যাসোসিয়েশন গুলি এটিএফের এক ছাদের নিচে একত্রিত হয়।
এটিএফ ঢাকার এই বছরের থিম "কানেক্টিং রিজিওনাল ট্যুরিজম”, তাই পর্যটন এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, সীমান্তের এপার-ওপার সংযোগ স্থাপন এবং আঞ্চলিক পর্যটন জোট গঠনের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
মেলার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট সামিট (বিটিডিএস) ২০২৩-এ, অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য – Investment Opportunities in Tourism, Emerging Trends of Smart Tourism, Responisble Initiative for the Sustainability of Future Tourism, Future Skilled Jobs and Entrepreneurship in Touirsm. এছাড়াও প্যারালাল সেশনের ফোরাম ডিসকাশনে থাকবে পর্যটন বিষয়ক স্টোরি টেলিং, কেরিয়ার গাইডেন্স, প্রফেশনাল টক ও রেস্পনসিবল ট্যুরিজম ক্লিনিক।
এই মেলা ও সামিটকে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স -এর মতো সম্মানিত সংস্থাগুলি যে ভাবে সার্বিক সমর্থন জানিয়েছে, তা পর্যটন শিল্পের প্রচার এবং বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে দেখানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে!
হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ঢাকা এই বছরে হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে হাত মিলিয়েছে এবং অতিথিদের আপ্যায়নের অংশীদার হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি ব্যাংক এবারের মেলার ব্যাংক পার্টনার। স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ) এবং স্কিল পার্টনার হিসেবে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) অংশগ্রহণ করায়, মেলার আয়োজক পর্যটন বিচিত্রা পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত ও বাধিত। আরও আছে, এটিএফ-এর এই ১০ম সংস্করণে ইনোভেশন পার্টনার a2i (আইসিটি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার), যার সহযোগিতায় স্মার্ট ট্যুরিজম নিয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ মেলা হিসেবে, এটিএফ ঢাকা পর্যটন মানচিত্রে একটি বড় জায়গা নিয়ে আছে। পর্যটকরা লোভনীয় ভ্রমণ গন্তব্য, অনন্য অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ ভ্রমণ প্যাকেজের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। কোলাহলপূর্ণ শহর থেকে নিরিবিলি সৈকত, ঐতিহাসিক স্থান থেকে আধুনিক আকর্ষণ - ভ্রমণের প্রতিটি দিককে ভালো ভাবে তুলে ধরবে এবারের মেলা।
এটিএফ ঢাকা, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, দুবাই এবং একাধিক অন্যান্য দেশ থেকে ৫০টি বিদেশী প্রতিষ্ঠান সহ ১৫০টি পর্যটন সংস্থার অংশগ্রহণের জন্য গর্বিত, যা এই মেলার আঞ্চলিক ব্যাপ্তি এবং প্রভাবের প্রতিফলন। বিটুবি ব্যবসার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও এখানে বিভিন্ন প্যাকেজ, ডিসকাউন্ট, স্পেশাল অফার ও নতুন গন্তব্যের হদিশ থাকবে।
এই মেলার অন্যতম সেরা আকর্ষণ হল শিশুদের অংশগ্রহণ, কারণ তারাই ভবিষ্যতের পর্যটক। শিশুদের উৎসাহ দিতে প্রতি বছর মেলায় একটি বড় আকারের অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম নেই।
এবারের মেলায় একটি ইংরেজি ভাষায় পর্যটন পত্রিকা The TravelBound – এর প্রথম সংস্করণ ও ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হল। এই পত্রিকাতে ও তার ওয়েবসাইটে থাকবে Tourism, Hospitality, Aviation, Cruises, Green Tourism, MICE, Events ও অন্যান্য যাবতীয় পর্যটন সংক্রান্ত তাজা খবর যা সকলের কাজে লাগবে।
১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার উদযাপনের জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শক, প্রদর্শক এবং উৎসাহীরা ঢাকায় জড়ো হয়েছেন। আমাদের কোভিড পরবর্তী জীবনে এবারের মেলা কেবল অতীতের উদযাপন নয় বরং পর্যটনের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে চলা একটি Blue Print, যেখানে যোগাযোগ, এবং আদান প্রদানের মাধ্যমে পর্যটনের নতুন দিগন্ত প্রসারিত হবে।
এমআই