ফাহিম হোসেন, ঢাবি প্রতিনিধি:
গতকাল রাতের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। একাধিক হলের শিক্ষার্থীরা জানান, বৃষ্টিতে হলের মূল গেট পর্যন্ত জমে গেছে হাঁটু সমান পানি। কোন কোন হলে পানি পৌঁছে গেছে বারান্দা পর্যন্ত। এতে হল প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখছেন না তারা।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, গেটের সামনে হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় হল থেকে বের হতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজিমপুরে অবস্থিত মেয়েদের এ দুটি হলের সামনে (এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) হাঁটুর উপর অব্দি পানি জমে আছে। এতে গেট পেরিয়ে পানি প্রবেশ করেছে হলের বারান্দা পর্যন্ত। কুয়েত-মৈত্রী হলের সিকদার মনোয়ারা ভবনের সামনে পৌঁছে গেছে পানি। এতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
বঙ্গমাতা হল ও কুয়েত-মৈত্রী হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল প্রচন্ড বৃষ্টিতে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বিদ্যুৎ চলে যায়। আজ (এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) বিকেল সাড়ে তিনটায়ও বিদ্যুৎ আসেনি। এখন অনেকের মোবাইল ফোন অফ হয়ে গেছে। তার উপর পানি তুলতে না পারায় কুয়েত-মৈত্রী হলে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। দুপুর থেকে খাবার পানি আনতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। পানিতে গেটের সামনে রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন চালককেরা। যাদের একান্ত বাধ্য হয়ে কোথাও যেতে হচ্ছে, তাদের অভিযোগ; পানি পারাপার হতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক শিক্ষার্থী সময় জার্নালকে জানান, 'বৃষ্টির কারণে আমাদের মেয়েদের দুটি হল এবং সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট সব অকেজো হয়ে পড়েছে। ফোনে চার্জ নেই। আমি খুব প্রয়োজনীয় একটা কাজেও বাইরে যেতে পারিনি। পানি না থাকায় গোসলও করতে পারছি না।'
বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের এক শিক্ষার্থী সময় জার্নালকে বলেন, 'বৃষ্টির পানি শিকদার মনোয়ারা ভবনের সামনে পর্যন্ত চলে এসেছে। পানি মাড়িয়ে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। হলে খাবার পানি নেই। গোসল করার পানিও শেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর ফোন বন্ধ হয়ে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। হল প্রশাসনের এসব বিষয়ে কোন তৎপরতা দেখছি না।'
বৃষ্টির পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের মূল গেট পর্যন্ত পানি জমে আছে। ভেতরে পুরো মাঠেও জমে আছে হাঁটুসমেত পানি৷ বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়েছেন এ হলের শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের ২ নম্বর এক্সটেশন ভবনের বারান্দায় বৃষ্টিতে পানি উঠে গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেকের আসবাবপত্র৷ রাতে কোনমতে তোষক দিয়ে পানি আটকে রেখেছিলেন। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বারান্দা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার বলেন, 'আমাদের দাপ্তরিক বেশ কিছু নথিপত্রও ভিজে গেছে। মেয়েদের ভবন এবং হাউজ টিউটর ভবনের নিচতলায় পানি উঠে গেছে। আমরা আসলে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। মুদি দোকানের চাল-ডালসহ অনেককিছু ভিজে গেছে। মেয়েদের সাংস্কৃতিক কক্ষের হারমোনিয়ামসহ অনেককিছু পানিতে ভিজে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'খাবার পানি নতুন করে তুলতে না পারায় খাবার পানিও শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকল্প পানি আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ থেকে বিকল্প বিদ্যুতের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভয়ের ব্যপার হলো, আজকেও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আবারও একই অবস্থ হবে।'
বিদ্যুতের বিষয়ে প্রধান টেকনিক্যাল কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বলেন, 'বৃষ্টির পানির কারণে গতকাল রাতেই কুয়েত-মৈত্রী হলের সাব-স্টেশন ব্লাস্ট হয়ে যায়। পানির কারণে আমরা এটি এখনো চালু করতে পারিনি। বেশি লোড হওয়ায় বিকল্প কোন জায়গা থেকেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে কিছু জরুরী লাইন সচল করতে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান বলেন, 'এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা না। এটি একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মেয়েদের মৈত্রী হল এবং বঙ্গমাতা হল আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। আমরা সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা অস্থায়ী বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি।'
এমআই