শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রীপুরে কেজি দরে পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগ

রোববার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
শ্রীপুরে কেজি দরে পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি : জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে সরকারি বই চুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এই চুরিকে বৈধতা দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন মাদরাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নজরে আসলে তিনি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে। 

১৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক সুপারভাইজার পারভীন ইসলাম বই বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করতে আসলে মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অফিস সহকারী আমিনুল হক তড়িঘড়ি করে চাহিদাপত্র ও বই বিতরণের তালিকা শিক্ষকদের হাতে ধরিয়ে দেন।তাদের চাপে ছাত্র/ অভিভাবকদের স্বাক্ষরের জায়গায় জাল স্বাক্ষর দেন কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষকদের জাল স্বাক্ষর দেয়ার একটি ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউড় হয়েছে। এরপরই তড়িঘড়ি করে বই বিক্রি ১৬ হাজার টাকা অফিসে জমা দেন অফিস সহকারী। এরইমধ্যে কয়েকজন সংবাদকর্মী অভিযুক্ত অফিস সহকারী আমিনুল হকের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বই বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টাও করেন তিনি। 

চুরি করে বই বিক্রির বিষয়টি গত ১২ সেপ্টেম্বর এলাকায় জানাজানি হয়৷ এরপর-ই অনুসন্ধানে নামে কয়েকজন সংবাদকর্মী। বিষয়টি প্রসঙ্গে মাদরাসায় কথা হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগমের সঙ্গে। শুরুতে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে বিষয়টি তিনি জানেন বললেও বই বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'শুধুমাত্র খাতা বিক্রি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়েবসাইট খোলার জন্য। প্রতিষ্ঠানে কোনো টাকা না থাকায় প্রতিষ্ঠাতা আঃ ছালাম বেপারী ও আমার অনুমতিক্রমেই খাতাগুলো বিক্রি করেছে অফিস সহকারী আমিনুল হক।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসাটির সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আমি প্রায় দেড় বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। এসময় অনিয়মের কোন ঘটনা ঘটেনি।সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম।২০২৩ সালের নতুন বই উত্তরের নতুন বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির নিচে গ্রীল ও তালা লাগিয়ে বিতরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি।সেইসাথে পুরাতন বই ও খাতা পশ্চিমের বিল্ডিং এর সিড়ির নিচে রাখার ব্যবস্থা করি। ওখানে বিগত তিন চার বছরের প্রায় ১৫-২০ বস্তা বই ও খাতা ছিল। গত রবিবার মাদরাসায় এসে শুনতে পাই ওই বই ও খাতা ভর্তি বস্তাগুলো নাই। এ বিষয়ে আমরা কয়েকজন শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,অফিস সহকারী আমিনুল প্রতিষ্ঠাতার নির্দেশে পুরাতন খাতা বিক্রি করেছে ওয়েব সাইট খোলার জন্য। 

এসব বিষয়ে কথা হয় মাদরাসার ইংরেজি প্রভাষক মোহাম্মদ শরীফ রায়হানের সাথে। তিনি বলেন, 'মাদরাসাটিতে অফিস সহকারী আমিনুল হকের  ভাবটা এমন যেন, তিনিই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষকদের পরিচালনা করেন। গত কয়েক মাস যাবত অনেক অনিয়ম হচ্ছে মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবেই অনিয়ম হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরের বই বিক্রি করেছে, ধরা খাওয়ার পর এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশে জমা করেছে । অথচ আগে কখনও ক্যাশে টাকা জমা দেওয়ার ইতিহাস নাই। সরকারি বই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করা রাস্ট্র বিরোধী কাজ। এটা কোনোভাবেই বিক্রি করার সুযোগ নেই প্রতিষ্ঠানের'। 

কথা হয় সহকারী মৌলভী মোঃ আব্দুল কাদিরের সাথে। তিনি বলেন,এভাবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিক্রি করা ঠিক হয়নি। উচিত ছিল সকল, শিক্ষক কমিটির সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে বিক্রি করা।

অভিযুক্ত অফিস সহকারী আমিনুল হক বলেন, অফিসের ওয়েবসাইট খোলার টাকার সংকট ছিল। তাই ১৬ হাজার ৩৩৪ টাকার খাতা বিক্রি করা হয়েছে, বই বিক্রি করিনি। পরে বিদায়ের সময় তিনি সাংবাদিকদের ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টা করেন। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম প্রথমত এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বললেও একপর্যায়ে বলেন, 'বই নয় খাতা বিক্রি করা হয়েছে'। তাহলে ২০২৩ ব্যতীত অন্যান্য সালে অতিরিক্ত বইগুলো কোথায় ? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি সংবাদকর্মীদের ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টা করেন।

শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমীন বলেন, 'সরকারী বই প্রতিষ্ঠানের বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানকে আগেই বলা আছে, বই অতিরিক্ত হলে শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে বিক্রির প্রয়োজন হলে শিক্ষা অফিস বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। ওই মাদরাসা সরকারি বই বিক্রি করে দিয়েছে, এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'। 

এসব বিষয়ে মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। বই দিয়েছে সরকার। সে বই বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। যদি বিক্রির বিষয়টি প্রমাণিত হয় তাহলে দোষীরা কোনো ছাড় পাবে না।

এসজে/আরইউ 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল