বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

নলছিটিতে বিলুপ্তির পথে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
নলছিটিতে বিলুপ্তির পথে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

মো. মোস্তা‌ফিজুর রহমান রিপন, ঝালকা‌ঠি প্রতি‌নি‌ধি:

কালের বির্বতনে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঝালকা‌ঠি জেলার নলছিটি উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

এমনই এক জনপদ বরিশাল নলছিটি উপজেলার দপদ‌পিয়া ইউ‌নিয়‌নের তিমিরকাঠী গ্রাম । এখানকার কুমারখালী বাজার সংলগ্ন ঐ‌তিহ‌্যবাহী পাল বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে এখন গুটি কয়েক পরিবার অনেক কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষের এ পেশাকে ধরে রেখেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাল বংশের নারী পুরুষ শিল্পীরা হাতের নিপুন ছোঁয়ায় সুনিপুনভাবে চাক ও আধুনিক মেশিনের সাহায্যে মাটি দিয়ে মৃৎশিল্পের যাবতীয় সামগ্রী তৈরী করেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠী গ্রামে কুমারখালী বাজার সংলগ্ন পাল বংশের সেই জৌলুশ আগের মত নেই। অনেকের মতে এটি শুধু শিল্পই নয় বরং আবহমানকাল থেকে গ্রাম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

মাটির নান্দনিক কারুকাজ আর বাহারী নকশার কারনে দেশে এর চাহিদা থাকলে ও উন্নত ডিজাইন আর আধুনিক প্লাষ্টিক ও সিলভারের পন্যের কাছে মার খা‌চ্ছে এক সময়ের জনপ্রিয় মৃৎশিল্পের সামগ্রী। পাল বাড়িতে বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি ভাবে মাটি দিয়ে তৈরী ব্যাংক, পুতুল, বধনা, কলশ, বাসন, হাড়ি, পাতিল,প্লেট, বাচ্ছা‌দের খেলনা সামগ্রী তৈরী রোদে শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে।

আলাপকালে এ পেশায় জড়িত থাকা পালবাড়ির বাবা দাদাদের পেশাকে যে গুটি কয়েকজন আঁকড়ে আছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন প্রয়াত সূর্য পালের ছেলে  সুধির পাল জানান, দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে পূর্ব পুরুষের ধারাবাহিকতায় আমি এ পেশায় জড়িত আছি। আমাদের জীবিকার একমাএ অবলম্বন মৃৎশিল্প এখন আমাদের জীবনযাপনের ব্যয়ভার মেটাতে পারছি না।

তাই এ পেশায় নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহ। তাছাড়া মাটির দাম ও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এক ট্রলার মাটি এখন ১৫ হাজার টাকায় কিনতে হয় । আয় আর ব্যয়ের সাথে আর পেরে উঠছি না। জানি না এ পেশায় আর কতো দিন টিকে থাকতে পারবো।

বর্তমান বাজা‌রে দস্তা, এ্যালুমিনিয়াম, প্লাষ্টিক, মেলামাইন এর ব্যবহারের ফলে মানুষ এখন আর মাটির তৈরী তৈজষ পএ ব্যবহার করছে না। তিনি আরো বলেন, সরকার আমাদের উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারী ঋন দিয়ে থাকে কিন্তু ব্যবসাই যদি না থাকে তাহলে ঋণ পরিশোধ করবো কিভাবে ।

তার চেয়ে সরকার যদি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিলভার ও প্লাষ্টিকের তৈরী পন্য বন্ধ করে দিতো তা হলে মৃৎশিল্পের সু-দিন আবার ফিরে আসতো। এ সব পন্য ব্যবহারেরর কারনে মানুষ এখন গ্যাস্ট্রিক ও ক্যানসারের মতো নিরব ঘাতক রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে।

আলাপকালে পালবাড়িতে মৃৎশিল্পের পন্য কিনতে আসা ক্রেতা মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, আমরা ছেলে বেলায় গ্রামের বাড়িতে মাটির পাতিলে দাদি নানীদের পাক করতে দেখেছি কিন্ত এখন তো সে জায়গা সিলভার ও প্লাষ্টিকের পন্য দখল করে নিয়েছে । নতুন প্রজন্ম কে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মেলার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।

বিশিষ্টশিক্ষাবীদ অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, এক সময় আমরা গ্রামে কাদাঁ মাটি গায়ে মেখে বড় হতাম।সেই কাদাঁ মাটির তৈরী সামগ্রীতে আগের দিনে খাদ্য তৈরী করা হত। যা স্বাস্থ্যসম্মত ছিল। বর্তমানে মানুষের জন্য ক্ষতিকর সিলভার, মেলামাইন, প্লাষ্টিকের পন্য বাজার দখল করে নিয়েছে। এ গুলো ব্যবহারে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এই শিল্পটাকে উজ্জীবিত করা। আমি এখনো মাটির শিল্পটাকে হৃদয় দিয়ে আহরন করি। আমি মৃৎশিল্পের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও পণ‌্যগু‌লো রক্ষায় বদ্ধপরিকার। তাদের যদি কোন সহায়তার দরকার হয় সেটা অবশ্যই করা হবে।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল