নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘সংসদ নির্বাচনের দিন সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না’ এমন নির্দেশনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুরু থেকে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবল আপত্তি থাকায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে ইসি। ফলে ভোটের দিনে মফস্বলে কাজ করা সংবাদকর্মীদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংশোধন অনুমোদন করেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সংশোধিত এই নীতিমালা জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের জন্য শর্তগুলো সাধারণভাবেই প্রযোজ্য। যেমন- চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা, মোটরসাইকেলের নিবন্ধনসহ অন্যান্য কাগজপত্র থাকা ইত্যাদি। এতে সাংবাদিকদের নিজের মোটরসাইকেল ব্যবহারে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
এর আগে গত ১২ এপ্রিল সংবাদকর্মীদের ভোটের দিন সংবাদ সংগ্রহ করার বিষয়ে নীতিমালা জারি করে ইসি। এতে বলা হয়, সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিকসংখ্যক গাড়ির স্টিকার দেওয়া হবে। তবে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কোনো সাংবাদিকের জন্য গাড়ির স্টিকার দেওয়া হলে স্টিকারের ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।
তবে ওই নির্দেশনার পর থেকে নির্বাচন কমিশন বিটে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসিসহ (আরএফইডি) একাধিক সাংবাদিক সংগঠন বিরোধিতা করে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সুযোগ আগের মতো রাখার দাবি জানান। অবশেষে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন।
গত জুনে জারি করা নির্দেশনায় সাংবাদিকরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না এই মর্মে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়-
১. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
২. ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোট কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না।
৩. একইসঙ্গে দুইয়ের বেশি মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না।
৪. ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না।
৫. ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
৬. ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে। কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।
৭. সাংবাদিকরা ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের জন্য ইসির নীতিমালা বাতিল চায় টিআইবি
৮. ভোটকক্ষ হতে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না।
৯. কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
১০. ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনি নির্দেশনা মেনে চলবেন।
১১. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
১২. কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
১৩. নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলবেন।
এমআই