সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শৃঙ্খলা শেখানোর নামে নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং এবং মধ্যরাতে মাদকাসক্ত অবস্থায় মেডিক্যাল ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অভিযুক্ত ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনকে স্থায়ী এবং তিনজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি দুইজনকে সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন, মেডিকেল ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান সিদ্দিকী কাব্য এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ইমন ও হিশাম নাজির শুভ।
অন্যদিকে সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত HRM বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার পুলক, সাদমান সাকিব আকিব, ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিব।
ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন জানান, তদন্তে মেডিকেল ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান সিদ্দিকী কাব্য এর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার স্থায়ী বহিষ্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাকি দুই শিক্ষার্থী সালমান আজিজ ও আতিক আরমান ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ঘটনার সাথে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদেরকে শেষবারের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
অন্যদিকে র্যাগিংয়ের ঘটনায়ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট এর ৪ এবং ৫ ধারা মোতাবেক অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ইমন ও হিশাম নাজির শুভ এর আগ্রাসী ভূমিকা থাকার কারণে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি তিন অভিযুক্ত সরাসরি ঘটনার সাথে জড়িত না হলেও যেহেতু তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনো বাঁধা প্রদান করেনি, সমর্থন করেছে। সেজন্য আগামী এক বছরের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ইমন, শাহরিয়ার পুলক, হিশাম নাজির শুভ, সাদমান সাকিব আকিব, ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিবের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ জানিয়ে একটি মেইল করেন। পরে ৯ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে ছেলেকে দিয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এর আগে গত ১০জুলাই মাদকাসক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরী বিভাগে ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের মারধর এবং কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠে আইন বিভাগের ছাত্র রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য, সালমান আজিজ ও আতিক আরমানের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিনকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ আজ সভায় উভয় তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
সময় জার্নাল/এলআর