সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শৃঙ্খলা শেখানোর নামে নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজনকে স্থায়ী এবং তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন অভিযুক্তদের সহপাঠীরা।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৪টা থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিভিন্ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন।
এতে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ গামী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বাসগুলো আটকে পড়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ইমন, শাহরিয়ার পুলক, হিশাম নাজির শুভ, সাদমান সাকিব আকিব, ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আজ সকাল ১১টায় ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট এর ৪ এবং ৫ ধারা মোতাবেক অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ইমন ও হিশাম নাজির শুভকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার এবং বাকি তিনজনকে আগামী এক বছরের জন্য বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিকাল ৪টায় শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ শুরুর ৩০ মিনিট পর প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হন। তারা বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় কথা বলেও পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হন। পরে এক পর্যায়ে পৌনে ৬টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডির সাথে শিক্ষার্থীদের সমঝোতায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই ভুয়া তদন্তের মাধ্যমে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক। বিক্ষোভে তারা বর্তমান তদন্ত কমিটি অপসারণ করে তার স্থলে নতুন কমিটি দিয়ে নতুন করে তদন্তের জোর দাবি জানান। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তারা। এবং পরবর্তীতে প্রাথমিকভাবে নেওয়া বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্তই যদি সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও প্রদান করেন।
আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বহিষ্কারের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করার উৎসব চলছে। এখন শিক্ষার্থীরা যদি আত্মহত্যা করে তাহলে এর দায়ী কে নিবে? এই কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন ভুয়া। কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে।
অবিলম্বে বর্তমান তদন্ত কমিটি সরিয়ে তার জায়গায় নতুন কমিটি দিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাই।’
তারা আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের একটি বক্তব্যের কারণে আমাদের বন্ধুদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার এই বক্তব্য যেহেতু সঠিক ছিলো না তাই তাকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অফিসিয়ালি বক্তব্য দিতে হবে যে, ওই ছাত্রদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা এখনও অফিসিয়ালি চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের বন্ধুদের বহিষ্কারের যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হতে পারবে না। যদি কথিত র্যাগিংয়ের নামে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয় তাহলে আমরা এখান থেকে আল্টিমেটাম দিচ্ছি, দাবি আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা যা করা উচিত আমরা তা করবো। আমরা আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রক্টরের সাথে কথা হয়েছে, এটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখনো রেজুলেশন হয়নি। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সিন্ডিকেটের সুপারিশ আকারে যাবে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এমআই