আদালত প্রতিনিধি:
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে) ২২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর ১৩ আসামির সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পি কে হালদারের দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা ১০ বছরের কারাদণ্ড ও মানিলন্ডারিং আইনে ১২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা আলাদাভাবে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তাকে ২২ বছরের কারাভোগ করতে হবে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৫২ মামলার মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়। বাকি ৫১ মামলা এখনো তদন্তাধীন।
রায়ের পর্যাবেক্ষণে বিচারক বলেন, বিদেশে যারা অবৈধভাবে সেকেন্ড হোম গড়েছে, তারা আসলে দেশকে ভালোবাসে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং মুক্তির চেতনা নিয়ে অর্থপাচারকারীদের প্রতিহত করতে হবে। অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারের মতো অর্থপাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা আদর্শ লালন করে না।
তবে তারা অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। প্রকৃতপক্ষে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে তাদের সমবেতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
‘ফলস্বরূপ, অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে কোনো প্রকার ছাড় পাওয়ার যোগ্য নন। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এখনও মুলতুবি রয়েছে যদিও এটি অনেক আগেই কানাডায় পাঠানো হয়েছিল। উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্র একা অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতা এবং আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের দেশে অর্থ পাচারের অপরাধ প্রতিহত করা যেতে পারে।’
অন্যদিকে আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধাক, লিলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রিকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা তিন বছরের কারাদণ্ড ও মানিলন্ডারিং আইনে চার বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসাথে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তাদের চার বছর কারাভোগ করতে হবে।
কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। একই সঙ্গে তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অর্থপাচার আইন-২০০২ এবং দুর্নীতি দমন আইন- ১৯৮৮’র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্তদেরর নামে চার্জ গঠন করা হয়।
বর্তমানে পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ আসামি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর একমাত্র নারী আসামি আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
সময় জার্নাল/এলআর