সময় জার্নাল প্রতিবেদক : পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বর্তমানে আমরা উচ্চমাত্রায় ঋণগ্রস্ত। তবে ঋণখেলাপি হব না। সব ঋণ শোধ করে দেব।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের রোববার ছিল দ্বিতীয় দিন। এদিন বিভিন্ন সেশনে দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।
এ অঞ্চলের শান্তি স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন। তিন দিনের এ সম্মেলনে ৫০টি অধিবেশনে ৭৫টি দেশের গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ ২ শতাধিক আলোচক অংশ নিচ্ছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব কঠিন এক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর আঁচ বাংলাদেশেও লেগেছে। সে হিসাবে বাংলাদেশও সংকটকালীন সময় পার করছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে যাবে।
তিনি বলেন, একটা সময়ে দেশে বিদ্যুৎ ছিল না। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা ছিল নাজুক। শিক্ষার হার ছিল তলানিতে। এসব অবস্থা বাংলাদেশ উত্তরণ করেছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করবে। ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে বাংলাদেশ।
এমএ মান্নান বলেন, গ্রামে রাস্তাঘাট তৈরি করা হচ্ছে। যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করার সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও গ্রামীণ উন্নতিকে বিশ্বমানের মাপকাঠিতে সামগ্রিক উন্নতি বলা যায় না। তবে যা হচ্ছে তাতে করে মানুষ অন্তত তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসা অর্থাৎ এসএমই’র ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
দেশের ব্যবসা খাতে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অবদানের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ অর্থনীতি প্রাইভেট খাতের হাতে। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য বিদেশি প্রাইভেট খাতের ওপরে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় খাতকে সমৃদ্ধ করা। অন্যদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকেও সরকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিচ্ছে।
সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিক তাডিক বলেন, বিশ্বে ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। এর বিপরীতে বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে জোট গঠন করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আগে যেসব পূর্বাভাস ছিল, বর্তমানে বিশ্বে সেই রকমই দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছুর হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আভাস দিচ্ছে।
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে বরিস বলেন, পাঁচ বছর আগেও একটি স্বাভাবিক বিশ্বব্যবস্থা বিরাজমান ছিল। এখন শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না, ইসরাইল-ফিলিস্তিনির পুরোনো সংঘাতও বিশ্বকে উসকে দিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে কারও সঙ্গে কারও সংহতি নেই। যে যার মতো জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন শুধু সীমানা এবং আধিপত্যকেন্দ্রিক সংঘাত নয়, করোনা সময়ে ভ্যাকসিন নিয়ে যে রাজনীতি হয়েছে, তা সারা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বার্তা। আগে যে কোনো বৈশ্বিক সংকটে দেশগুলো একাট্টা হয়ে কাজ করত। এখন তা একদমই নেই।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক সাজানহার বলেন, ব্রিক ব্যাংক, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এআইআইবিসহ অনেক ব্যাংক আসছে। তারা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করবে। কারণ এই অঞ্চলের অবকাঠামোতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও নতুন ব্যাংক এলে তারা আর্থিক খাতে যথাযথ নিয়ম মেনে চলবে। তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ওয়ারের (বিশ্বব্যাপী আর্থিক যুদ্ধ) কথা আসছে। কিন্তু আমি এর সঙ্গে একমত নই। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান এলে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এসব ব্যাংক জি সেভেনের অংশীদার হিসাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন জি-৭ এবং জি-২০ একে অন্যের প্রতিপক্ষ নয়। পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য সেশনে বক্তারা বলেন, নিকট ভবিষ্যতে ডলারের আধিপত্য কমবে না। কমতে সময় লাগবে। তবে এখনো রিজার্ভের জন্য অন্য মুদ্রা রয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও ডলার গুরুত্বপূর্ণ থাকবে। ইউরোপ-আমেরিকা অর্থাৎ জি সেভেন দেশগুলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিকে যাচ্ছে। আর ব্রিকসের দেশগুলো উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে টেকনোলজির যুগে পশ্চিমাদের মোকাবিলা করবে ব্রিকস এটি বড় প্রশ্ন। এ ছাড়াও জি ৭ এবং জি ২০ দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব রয়েছে।
এসজে/আরইউ