আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নির্বিচারে বিমান হামলার পর এবার গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, শুক্রবার ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী ও ট্যাঙ্ক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা থেকে প্রাণভয়ে নারী–শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালাচ্ছেন মানুষ। অনেকে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন মাইলের পর মাইল। সঙ্গে নিয়েছেন পোষা গরু, উট, ভেড়া আর গাধা। যতটুকু সম্ভব, তা নিয়েই অনিশ্চয়তার যাত্রা শুরু করেছেন তারা।
ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলে গাজায় টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারি বোমাবর্ষণের পর এই প্রথম স্থল অভিযান শুরু করল ইসরাইল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, আগামী দিনগুলোতে তারা গাজা শহরে 'উল্লেখযোগ্য' অভিযান চালাবে। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকরা ফিরে আসতে পারবেন না।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ফিলিস্তিনি রকেট ক্রুদের ওপর হামলা চালাতে এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের অবস্থানের তথ্য জানতে ইসরাইলি সেনারা ট্যাঙ্কের সাহায্যে অভিযান চালিয়েছে।
শুক্রবার সকালে গাজা শহর থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বেসামরিক নাগরিককে দক্ষিণে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানায় ইসরাইল। এরপরই গাজার উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য বাসিন্দাকে রাস্তায় ছুটতে দেখা গেছে। তবে অনেকে আবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন।
তবে হামাস তাদের বাসস্থান ছেড়ে যেতে নিষেধ করেছে। হামাস বলছে, তারা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও লড়াই চালিয়ে যাবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনের বসবাস। টানা এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের নজিরবিহীন বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ১৯০০ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬৯৬ জন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত ও আহতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী ও শিশু।
গাজার কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবনের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, গাজা ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যুই ভালো।
গাজার মসজিদগুলো থেকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে, আপনার বাড়িতে থাকুন। আপনার জমি ধরে রাখুন।
হামাসের মুখপাত্র ইয়াদ আল-বোজোম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা উত্তর গাজা এবং গাজা শহরের জনগণকে বলছি, আপনার বাড়িতে এবং আপনার জায়গায় থাকুন।
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের স্থল হামলায় ৭০ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যদি এতো লোককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, তবে একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।
শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের অবিলম্বে গাজাজুড়ে মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া দরকার, যাতে আমরা প্রয়োজনে প্রত্যেকের কাছে জ্বালানি, খাবার এবং পানি পৌঁছে দিতে পারি।
সময় জার্নাল/এলআর