প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর:
হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করেছি চূড়ান্ত বিজয়, পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র, পেয়েছি লাল-সবুজের গৌরবান্বিত একটি পতাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের অমর কবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর দেশ পুনর্গঠনে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য, বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর একটি আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।তাঁর সাড়ে তিন বছরের সেই স্বদেশ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ জাতি স্মরন রাখবে চিরকাল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেন। সে সময় দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন।সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন ৭৫-এ পরিবার হারানো শেখ হাসিনা।ঐতিহাসিক সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়।১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাঁকে বারবার কারান্তরীণ করা হয় ।তাঁকে হত্যার জন্য সশস্ত্র হামলা করা হয় বিভিন্ন সময়ে।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় কুচক্রীদের সব মরণফাঁদ ভেদ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন দৃঢ় অবিচল।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার আজীবন লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সব রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার থেকেছেন এবং প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছেন।২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। টানা ১৪ বছরের এ শাসনামলে অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক।শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসামান্য নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। একটা সময় বাংলাদেশকে উপহাস করে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। যারা সে সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের বড় অর্জন, বড় সফলতা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করেছে। শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে। দেশবাসী আজ তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের সুফল পাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন, ১০০ মহাসড়ক-সড়ক উদ্বোধন, একদিনে ১ কোটি মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রের বুকে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সুনীল অর্থনীতির নতুন দুয়ার উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, পদ্মা রেল সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনাসহ যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন, তখনও দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। নিয়মিত লোডশেডিংয়ে তখন জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। বিদ্যুৎ খাতের এই করুণ অবস্থার কারণে বৃহৎ শিল্পগুলো যেমন একদিকে ধুঁকছিল, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। একইসঙ্গে দেশকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সুবিধা ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য রোল মডেল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। আলু উৎপাদনে রয়েছে সপ্তম অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে আছে বাংলাদেশ ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত, সেই বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর বুকে এক অপার বিস্ময়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে গেছে দেশের সামগ্রিক চিত্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্বদরবারে দ্রুত উন্নয়নশীল বিকাশমান অর্থনীতির দেশ।বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র বিকাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম ও অতুলনীয়।তাঁর দূরদৃষ্টি, এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমেছে দারিদ্র্যের হার।বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বাংলায় ইতিহাস হয়ে থাকবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের এমন কোনো দিক নেই যেখানে বাংলাদেশের পদচারণা হয়নি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজকের দিনটি আমাদের জন্য অনন্যসাধারণ একটি দিন। আজ আমরা আমাদের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা,সেখানে তৃণমূলের মানুষ, অবহেলিত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি।”
শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হওয়া উন্নয়নের ঝাণ্ডা এখন বয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর রক্ত , রাজনীতি ও আদর্শের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা। প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি, বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরন, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দানসহ শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা এখন বিশ্বের কাছে উদাহরণ। তবে চ্যালেঞ্জও আছে বেশ কিছু। এদিকে উচ্চশিক্ষা ছড়িয়ে দিতে একের পর এক বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। বেড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও ।
রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার যে ক্যারিশমা তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন তা এখন উন্নত বিশ্বে শেখ হাসিনাকে রূপ দিয়েছে উন্নয়নের রোল মডেলে হিসেবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে তাঁর যাদুকরি নেতৃত্বে।বাংলাদেশে এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, নেতৃত্বের দক্ষতায়, দল ও দেশ পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস, সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ।বর্তমানে রপ্তানিকে সামনে রেখে পৃথক পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে দেশে উৎপাদন ব্যবস্থা সচল হবে, রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে।
গত ১৪ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন- যে কোনো সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দরিদ্র্যতা হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি- সব ক্ষেত্রই বিশ্বে বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। স্বাধীনতা অর্জনের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন বিশ্বদরবারে উন্নয়নের রোল মডেল।যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ - যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস ।সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এর মধ্যে একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া। নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা, শহর ও গ্রামের সেবা প্রাপ্তিতে দূরত্ব হ্রাস করা সবই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গ্রামে বসেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারছে। এ সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির ফলে।
বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত যাত্রী সেবার দিতে যাত্রা শুরু করেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। ৭ই অক্টোবর এই প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্ময়কর অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের পালকে যুক্ত হয়েছে আরও একটি স্বর্ণালী অধ্যায়। দেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক জ্বালানির যুগে। এতে করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো দেশ। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে।চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে।কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে।সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্প-কারখানার বিকাশ সাধন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেল বেকারত্ব দূরীকরণসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন।বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর এখন নতুন কর্মসূচি এসেছে। সেটি হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে উঠবে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।শেখ হাসিনা জনগণকে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেশকে বিশ্বসভায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ-শান্তিময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বিশ্বের কয়েকটি জরিপ প্রতিবেদনেও শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে।আপন কর্মমহিমায় শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা, সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি।
এমআই