নিজস্ব প্রতিবেদক : অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনসমর্থনহীন শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিমূর্লের মহাপরিকল্পনায় লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে খাবারের মধ্যে বিষপ্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারের নামে প্রহসনের সাজা দেওয়া এবং গুম-খুন-গুপ্তহত্যার বিবিধ প্রণালি অবলম্বন করেছে সরকার।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত যে, বন্দি বেগম জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে। আর এটির স্বয়ং প্রকাশ হচ্ছে-লন্ডনে শেখ হাসিনার বক্তৃতা। সেই বক্তৃতার মধ্যেই নিহিত ছিল বিচার-বুদ্ধিহীন ও বিবেচনা শক্তিহীন প্রতিশোধের ইঙ্গিত। বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বাধাদান, সেটারই বড় প্রমাণ।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
রিজভী বলেন, দেশবাসী জানে একজন ব্যক্তির জীবন-মরণের বেদনার্ত করুণ সন্ধিক্ষণের কাহিনী। এই ব্যক্তিটি জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। যিনি জীবনে কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হননি, তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আপসহীন সংগ্রামে। এই ব্যক্তির নিরন্তর সংগ্রাম ছিল অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের। তিনি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে নির্ভীক যোদ্ধার মতোন তেজোদীপ্ত। তিনি দেশের অগ্রগতি ও প্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার আহ্বানে ছাত্র-যুবক-নারী পুরুষ নির্বিশেষে জনতা বুক চিতিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করত না। তিনি দেশবাসীর শুভেচ্ছা, ভালোবাসায় সমাদৃত বেগম খালেদা জিয়া। সংগ্রামী মানুষ যে আবেগজনিত শক্তি অর্জন করেছে তার প্রেরণা বেগম খালেদা জিয়া। যিনি আজ স্বৈরশাহীর নিষ্ঠুর আচরণে জীবন-মৃত্যুর টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রীর অকথ্য, রূঢ় ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে তিনি চিকিৎসাবঞ্চিত। বেঁচে থাকার জন্য একজন অসুস্থ মানুষের মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছেন সংকীর্ণচিত্ত ও অহরহ অপরিচ্ছন্ন কথাবার্তার মুখপাত্র অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। উন্নত চিকিৎসাবঞ্চিত দেশনেত্রীর শোচনীয় দুরবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও স্থায়ী জামিনের বিষয়ে খ্যাতিমান চিকিৎসক ও আইনজীবীদের মতামতকে নিরেট অজ্ঞতাবশত নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিহিংসা মেটাতে অগ্রাহ্য করছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নত চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পৃথিবী থেকে সরানো।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি যখন দেশে ফেরেন তখন তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এর কয়েক মাস ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্য দেশবাসী সবাই ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছে। দেশনেত্রী হেঁটেই কারাফটক পার হয়েছেন। তাহলে সোয়া দুই বছরে তিনি কেনো এত গুরুতর অসুস্থ হলেন? হিংসা, রক্তপাত, দ্বেষ আর অসততার সংমিশ্রণে যদি রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে ভয়ানক অশুভ কিছু ঘটানো যায়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতির নামে বিরোধী নেতাকে হত্যার নানা দৃষ্টান্ত আছে দুনিয়াজুড়ে। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেকসাই নাভালিন এর চায়ের মধ্যে বিষ মেশানো হয়, বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, অসুস্থ ইয়াসির আরাফাত এর মধ্যে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলেনিয়ামের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। এটাই তার মৃত্যুর কারণ। চীনে চীন বংশের সম্রাট হুন কুয়াংশু ক্ষমতাচ্যুত হলে গৃহবন্দি থাকাবস্থায় বিষ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে। একজন মোঘল সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি ফরাসি চিকিৎসককে। কারণ পরবর্তী সময়ে মোঘল সম্রাটের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। সারাবিশ্বে এহেন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। কতৃর্ত্ববাদী নাৎসি একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী নেতাদের কারাগারে বিষপ্রয়োগে হত্যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ অবস্থায় প্রবেশ করেন, তাহলে কী কারণে এত জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি আক্রান্ত হলেন? বেগম জিয়ার রোগব্যাধির ভয়াবহতা এখন চরম পর্যায়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। কারাগারে যাওয়ার পরে যকৃতের রোগ (লিভার সিরোসিস) দেখা দিয়েছে। যে রোগের কারণে তার পোর্টাল হাইপারটেনশন, পেটে ও ফুসফুসে পানি আসা, অন্ত্রের রক্তরক্ষণ হচ্ছে- যার চিকিৎসা এদেশে আর সম্ভব নয় বলে মেডিকেল বোর্ড ইতোমধ্যে পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়াও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নেই। তার হৃদযন্ত্রের অবস্থাও ভয়ানক অবনতির দিকে। ইতোমধ্যেই তার হৃৎপিণ্ডে একটি রিং বসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিডনি রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সবমিলিয়ে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বারবার তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্রোধ মেটাতে অপমান ও বিপন্নতাকে প্রকট করে তুলেছেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রীকে জীবন-মৃত্যুর পথরেখায় ঠেলে দেওয়া সেই অবিরাম আগ্রাসী হিংসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন প্রতিক্ষণ। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর মানসিক সজীবতা নেই বলেই ক্ষুদ্রত্বের, অপরাধের, কলুষতার চর্চা থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অন্ধকার গণতন্ত্রের সব আলোটুকু গিলে ফেলেছে। নীরব নির্বাক রাষ্ট্রসমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য হচ্ছে-শেখ হাসিনা যে, বাংলাদেশকে ধনরত্নসম্ভার লুণ্ঠনে স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন সেটিকে টিকিয়ে রাখা। এ জন্য শেখ হাসিনার কাছে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র এবং বেগম খালেদা জিয়া শত্রুপক্ষ। তাই নানা কলাকৌশলে দেশনেত্রীকে দুনিয়া থেকে সরানো ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় তলে তলে মহাআয়োজন চলছে। বেগম জিয়াকে বিষপ্রয়োগে হত্যার পরিকল্পনাটি ক্লিয়ার হয়েছে লন্ডনে শেখ হাসিনার বক্তৃতায়। ‘সময় হয়ে গেছে, এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই’ অর্থাৎ শেখ হাসিনা জানেন বেগম জিয়া কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। কারণ বিষের কার্যকারিতার মেয়াদ একমাত্র অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন।’
এসজে/আরইউ