ধর্ম ডেস্ক:
আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। প্রতিদিন পাঁচবার আজানের মাধ্যমে মুসলমানদের নামাজের জন্য ডাকা হয়। আজানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ভালোবাসা স্থাপন প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। হাদিস শরিফে আজান দেওয়ার বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবার উঁচুতে থাকবে। (সহিহ মুসলিম, আজানের ফজিলত অধ্যায়, হাদিস : ৩৮৭)
আজান দেওয়ার ১২টি আদব উল্লেখ করা হলো-
১. পুরুষ আজান দেবে, নারীদের আজান দেওয়ার অনুমতি নেই। যদি কখনও কোনও নারী আজান দেয়, তাহলে তখন ফের আজান দিতে হবে।
২. আজান এমন ব্যক্তির দেওয়া উচিৎ, যে শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানে এবং সে নেককার ও পরহেজগার হয়। এক্ষেত্রে যদি সে সুকণ্ঠ ও উঁচু আওয়াজের অধিকারী হয়, তাহলে এটি বেশি ভালো।
৩. মুয়াজ্জিনের সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া উচিৎ। পাগল ও মাতাল ব্যক্তির আজান দেওয়া মাকরুহ। একই হুকুম শিশুর আজান দেওয়ার ক্ষেত্রেও।
৪. মসজিদের বাইরে কোনও উঁচু জায়গায় কেবলামুখী হয়ে আজান দিতে হবে। শুক্রবার জুমার খুতবার আগে যে আজান দেওয়া হয়, সেটা খতিবকে সামনে রেখে দেওয়া জরুরি নয়। আবার মসজিদের ভেতরে কিংবা খতিবকে সামনে রেখে ওই আজান দেওয়াতেও কোনও সমস্যা নেই।
৫. দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া। বসে আজান দেওয়া মাকরুহ।
৬. আজান দেওয়ার সময় দুই হাতের শাহাদাত (তর্জনী) আঙ্গুল দুই কানের ছিদ্রের মধ্যে রাখা মুস্তাহাব।
৭. আজানের শব্দগুলো থেমে থেমে বলা ও ইকামতের শব্দগুলো না থেমে একসঙ্গে বলা সুন্নাত। আজানের শব্দগুলো এতটা ধীরে বলা উচিৎ, যাতে শ্রবণকারী তা শুনে শুনে জবাব দিতে পারে।
৮. আজানের মধ্যে ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ বলার সময় ডান দিকে ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় বাম দিকে চেহারা ঘোরানো সুন্নাত। চেহারা এত বেশি ঘোরানো যাবে না যে কাঁধের ওপর নজর চলে যায়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা জরুরি- চেহারা ঘোরাতে গিয়ে আবার সিনা ও পা কিবলার দিক থেকে সরে না যায়।
৯. আজান দেওয়ার সময় সালাম দেওয়া ও তার জবাব দেওয়া কোনওটাই জায়েজ নেই। আজানের মধ্যে যদি কেউ কথা শুরু করে দেয়, তাহরে ফের আজান দিতে হবে।
১০. যখন কারও কানে আজানের আওয়াজ আসবে, তখন সে পুরুষ হোক কিংবা নারী, তার উচিৎ হলো- তখনই আজানের দিকে মনোযোগী হবে। এ সময় চলন্ত ব্যক্তির দাঁড়িয়ে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম।
১১. জুমার প্রথম আজান শোনার পরই সকল কাজকর্ম ছেড়ে মসজিদমুখী হওয়া ওয়াজিব।
১২. নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া মুস্তাহাব। (জিও নিউজ উর্দু)
আজানের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে করাচির জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়্যাহর ফতোয়ায় বলা হয়েছে— ‘আজানের সময় তা অত্যন্ত মনোযোগ ও সম্মানের সঙ্গে শ্রবণ করা উচিৎ। আর মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে আজানের শব্দগুলো উচ্চারণ করে আজানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব এবং আজান শোনা মাত্রই সমস্ত কাজকাম ছেড়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া।’
ওই ফতোয়া আরও বলা হয়েছে— ‘আজান শুনে (বসা ব্যক্তির) দাঁড়িয়ে যাওয়া কিংবা খাবার গ্রহণ বন্ধ রাখা জরুরি নয়। তবে এক্ষেত্রে চলন্ত ব্যক্তি যদি আজান শুনে দাঁড়িয়ে যায় এবং আজানের জবাব দেয়, এটি উত্তম। অনুরূপভাবে কোরআন তিলাওয়াতকারী আজান শুনলে তিলাওয়াত বন্ধ রেখে তার জবাব দেবে এবং আজানের সময় কোনও ধরনের অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না।’
এমআই