শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আমার প্রথম কর্মস্থল

শনিবার, মে ২২, ২০২১
আমার প্রথম কর্মস্থল

অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা :

বিসিএস এডুকেশন ক্যাডারে যোগদানের আগে, মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্টের একমাসের মধ্যেই আমি একটি সরকারি স্কুলে ( পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়)  যোগদান করি।

আজ আমার সরকারি কর্মজীবন শুরুর ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে!

আমি ছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএমএস ১৯৮৭ এর ব্যাচ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সময়টায় বারবার পেয়েছি 'এরশাদ ভ্যাকেশন'! ফলশ্রুতিতে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করলাম ১৯৯১ এর জানুয়ারীতে। 

চাকরী করবো  - সেটা নিশ্চিতভাবে আমার জীবনের লক্ষ্য ছিলো।

সে কারণে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে টুকটাক আবেদন করা শুরু করলাম। এর মাঝে IBS এ ভর্তির ফর্মও তুলে ফেললাম।

গান শোনা, গল্পের বই পড়া, বন্ধুদের সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা, ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়া বন্ধুদের চিঠি লেখা - এভাবেই অলস সময় কাটাচ্ছি।

হঠাৎই খবর পেলাম - সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে ২টা শিফটে ভর্তি ও ক্লাশ শুরু হবে। এ কারণে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। 

মাস্টার্সের রেজাল্ট সবে হয়েছে। সাময়িক সনদপত্র দিয়ে আবেদন করলাম মার্চে। এপ্রিলে পরীক্ষা। মে মাসের মাঝামাঝি হাতে পেলাম নিয়োগপত্র।

এখনও মনে আছে সেই দিনটার কথা।



বন্ধুদের সাথে খেলাচ্ছলে আবেদন করেছিলাম। বিভিন্ন   ধাপ পার হয়ে এত সহজে যে চাকরী হয়ে যেতে পারে তা আমার সুদূর কল্পনাতেও ছিল না।

আব্বা তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রোভষ্ট। বাগান সহ বিশাল ডুপ্লেক্স প্রোভষ্ট কোয়ার্টারে থাকতাম আব্বা, আম্মা আর আমি। ছোট দু'ভাই বুয়েটে পড়ার কারনে ঢাকায় থাকতো। 

ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আব্বা - আম্মা আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তাই ক্লাশ নাইনে যখন আর্টস নিলাম, অনার্সে আব্বার সাবজেক্ট অর্থনীতি না নিয়ে সমাজবিজ্ঞান নিলাম - ওনারা কখনই বারণ করেননি। কিন্ত এই প্রথম দেখলাম আব্বা দ্বিধান্বিত।

সরাসরি বারণ না করলেও বার বার বলতে লাগলেন, "পাবনায় তো চেনা কেউ নেই! আর সামনেই তো IBS এর পরীক্ষা - এখানে জয়েন করলে কি আর পরে হায়ার ডিগ্রী নেয়া সম্ভব হবে?"

শেষাবধি ঠিক হল - পাবনায় থাকার ব্যাবস্থা করতে পারলে আমি যোগদান করব!

২২ মে, ১৯৯১

৩০ বছর আগের এই দিন। 

সকাল বেলা আব্বার সাথে পাবনায় রওনা দিলাম। তখনও একা একা শাড়ি পরায় অনভ্যস্ত আমি। স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যেন একটু সিনিয়র দেখায় তাই আম্মার সাহায্য নিয়ে নীল রঙ শাড়ি পরলাম।

 মনে নানান ভয় - টেনশন নিয়ে শুরু হল সেই যাত্রা।

পাবনা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, পরে যাঁকে বড় আপা বলতাম সেই রেহানা খানম আপা, তিনি সব শুনে সস্নেহে বললেন, "আমি তো স্কুল ক্যাম্পাসেই থাকি! আমার গেষ্ট রুমও ফাঁকা - ও আমার কাছেই থাকবে!"

সেই শুরু। 

প্রথম চাকরী, প্রথম বাইরে থাকা, প্রথম উপার্জন।

স্কুল ক্যাম্পাসেই অবস্থিত শিক্ষক ডর্মিটরিতে  ৬/৭ জন সমবয়েসী সহকর্মী হোষ্টেল লাইফের মত থাকতাম। স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া সম্মান আর ভালবাসা, ওদের আন্তরিকতা, ছেলেমানুষি - সবকিছু মিলিয়ে আমার সাধারণ জীবন হয়ে উঠল অসাধারণ সুন্দর।

ওখানে কর্মরত অবস্থাতেই আমি ১৪তম বিসিএস দিয়ে উত্তীর্ণ হই।

১৯৯৩ এর ১৬ নভেম্বর ছিলো পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আমার শেষ কর্মদিবস। 

 পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসাবে আমি ১৯৯৩ এর ১৭ ই নভেম্বরে যোগদান করি।

 কিন্ত এখনও আমি পাবনায় যে কোন উপলক্ষে গেলেই স্কুলে একবার ঘুরে আসি। কয়েকজন পুরানো সহকর্মী,  কিংবা কর্মচারী,  স্কুল ক্যাম্পাস, যে ঘরে থাকতাম সেই ঘর - সবকিছুই আমাকে খুব বেশি আবেগতাড়িত করে ফেলে।

এখনও যখন পথ চলতে বা অন্য কোথাও হঠাৎ কোন তরুণী/ মহিলা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়, অচেনা কোন নাম্বার থেকে বিস্মিত - উৎকণ্ঠিত কন্ঠে কেউ পরিচয় নিশ্চিত করতে চায়, বা  ফেসবুকে হঠাৎ কোন ছাত্রীর দেখা পাই - তারা জানতে চায়, " আপনি কি আমাদের সেই নাজনীন আপা?"

আমিও ভীষণ,  ভীষণভাবে ইমোশনাল হয়ে পড়ি ওদের পেয়ে।

আমার জীবনের ৩০ বছর এভাবেই জড়িয়ে রয়েছে আমার প্রথম কর্মস্থল আর ছোট ছোট সেই মায়াবী মুখগুলো।

ভাল থাক ওরা সবাই!

লেখক : অধ্যাপক, স্যোসিওলজি বিভাগ, রাজশাহী কলেজ। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল