নিজস্ব প্রতিবেদক : মিরপুরে গার্মেন্ট শ্রমিক ও বহিরাগতদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর সাড়ে এগারো (পুরবী সিনেমা হল) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে কয়েকশ’ শ্রমিক।একপর্যায়ে বহিরাগতদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহতদের স্থানীয় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইপিলিয়ন, ডেকো, কনকর্ড ও অ্যাপোলো নিটওয়্যারের কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, সকাল ৯টায় তারা কারখানায় কাজে যান। কারখানায় ঢোকার সময় বহিরাগত লোকজন তাদেরকে (শ্রমিক) কারখানা থেকে বের না হওয়ার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তারা রাস্তায় বের হয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বহিরাগত লোকজন ও পুলিশ মিলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। হামলায় অন্তত শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক আহত হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
এদিকে দুপুর ১২টায় ৩ শ্রমিক মারা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তারা সড়কে থাকা গাছের ডান পালা ভেঙে কয়েকটি গার্মেন্ট ভবন ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তাদের ওপর হামলার যথাযথ বিচার করার আশ্বাস দেন এ সংসদ সদস্য।
গার্মেন্ট শ্রমিক কাজল, হনুফা, রেশমা বলেন, সকালে যখন কারখানা ছুটি দেওয়া হয় আমরা বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় বের হই। কিন্তু রাস্তায় বের হতেই অচেনা লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ ঘটনায় গার্মেন্ট মালিকদের ইন্ধন রয়েছে। বহিরাগতরা তাদের লোক। হামলায় কয়েকশ শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ইপিলিয়ন ও কনকর্ড গার্মেন্টের ৩ শ্রমিক মারা যান বলে দাবি করেন শ্রমিকরা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, আমি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকজন আহত হয়েছেন। কেউ মারা যায়নি। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পুরনের আশ্বাস দিয়েছি। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সকালে লাক্কু নামে এক সন্ত্রাসী গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছে। পরে তারা পালিয়েছে।
এ দিকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানান, আগামী বছরের শুরুতে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হওয়ার কথা। এ জন্য চলতি মাসে তাদের গ্রেড ঠিক করার কথা। কিন্তু মালিকপক্ষ গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা (মালিক পক্ষ) আগের বেতন বহাল রেখেই গার্মেন্ট চালাতে চান।
রেশমা, চান, কালাম নামে কালশী ২২ তলা (স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ) গার্মেন্টসের কয়েকজন শ্রমিক জানান, বর্তমানে তারা ৮ হাজার টাকা বেতন পান। নতুন মজুরি অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন বাড়িয়ে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা দিতে চান। গ্রেড পরিবর্তন করে তাদের এই বেতন বাড়াতে হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ গ্রেড পরিবর্তনসহ নতুন মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। এ জন্য তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
পল্লবী থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিস্তারিত পরে জানাব।
এসজে/আরইউ