সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী প্রতিনিধি:
মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ ধানের চারা। যে দিকেই চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। নরসিংদীতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নজর কাড়ছে আমনখেত। চারিদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সবুজ ধানখেতের মাঝে। শরতের রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।
মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা, আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। আর কয়েক দিনের মধ্যেই সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি।
এবার বর্ষা মৌসুমের শুর থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন লাগাতে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে আমন ধান চাষ করার নিয়ম থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা করতে পারেননি কৃষকরা। ধান রোপণে বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। দেরিতে বৃষ্টি হলেও ইতোমধ্যে আমন রোপণ লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ছাপিয়ে অতিরিক্ত আরও ১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বেশি করা হযেেছ।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪১ হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে উপসী এবং ৪ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। এছাড়া উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬ মেট্রিক টন।
জেলায় ৪১ হাজার ৬৯ হেক্টর জমির মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬০ হেক্টর, শিবপুরে ৯ হাজার ৩৪৯ হেক্টর, পলাশে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, বেলাবতে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর, মনোহরদীতে ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং রায়পুরায় ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানায়, নরসিংদী জেলায় ৭ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রনোদনা স্বরূপ সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও রোগবালাই কীটনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক দেলোয়ার হোসেন, করিমপুর গ্রামের কৃষক রাজু মিয়া, রসুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সময়মত বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমন ধানের চারাগুলো দেখে মনে হয় এ বছর ধানের ফলন ভালো হবে এবং তারা বেশ লাভবান হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি খেতে ধানের শীষ উঁকি দিচ্ছে। কৃষকরা তাদের ধানের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আমিরগঞ্জ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এমন সুন্দর ধানের চারা দেখে আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের লোকদের পরামর্শ নিয়ে আমরা উপকৃত।
বিশেষ করে নরসিংদী সদর উপজেলা এবং রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের নিচু জমিগুলো আমন ধানের উপর নির্ভরশীল। চরাঞ্চলের কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় তারা হতাশ। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় এবং যে পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় ধানের মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অনেক চাষি তাদের জমিতে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুযোর্গ না ঘটলে এবছর নরসিংদী জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত মাজরা পোকা ও বাদামী ফড়িং এবং গোড়া পঁচা রোগসহ ধানে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এতে কৃষকদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়া কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় যথাসময়ে জমিতে সার ও কিটনাশক প্রয়োগের ফলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সময় জার্নাল/এলআর