বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষাজীবন-ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত কুবির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা

রোববার, মে ২৩, ২০২১
শিক্ষাজীবন-ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত কুবির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই বন্ধে অনেকে চিন্তিত তাদের পড়াশোনা শেষ করা নিয়ে, চিন্তিত তাদের ক্যারিয়ার নিয়েও। করোনার এই বন্ধে সবচেয়ে বেশি হতাশায় আছে অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই তারা শেষ বর্ষে আটকে আছে। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাদের না শেষ হচ্ছে পড়াশোনা, না শুরু করতে পারছে চাকরি। শেষ বর্ষে আটকে থাকা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরছেন সময় জার্নাল প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান


সুস্মিতা আক্তার

অনার্স ৪র্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা অলস ভাবে বাড়িতে বসে আছি। এ অনির্দিষ্টকালীন মহামারী পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনলাইন ক্লাস হচ্ছে কিন্তু তার ফলপ্রসূ কোনো প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে না বললেই চলে। এই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে মুখ্যত আমরা তেমন কিছুই শিখতে পারছি না। আমাদের জানা নেই কবে আমরা আমাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে আমাদের ক্যারিয়ার গঠনে অগ্রসর হতে পারবো। দিন দিন আমাদের চাকরির বয়স বেড়ে চলেছে কিন্তু পড়াশোনার তেমন কোনো অগ্রগতিই আমাদের হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা মানসিকভাবে ভীষণ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছি। 

করোনা পরিস্থিতি সবার জীবনেই প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে মেয়েদের জীবনে আমি মনে করি এর প্রভাবটা একটু বেশিই। এখনো আমাদের সমাজে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে বাঁকা চোখেই দেখা হয়। পিতা-মাতাকে বুঝানো হয় তারা পন্ডশ্রম করছেন মেয়েদের পিছনে। সমাজের বিভিন্ন কটুক্তিতে অভিভাবকদেরও মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও বন্ধের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ভীষণ কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে, অনেক শিক্ষার্থী ঝরেও পড়েছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়তে বাধ্য হবে।

দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান খোলা আছে আর তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের উন্নয়নে কাজ করছে তারা প্রতিনিয়ত। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির সর্বাত্মক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তাই আমার মনে হয় অনতিবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া উচিত। আমরা জানি শিক্ষিতরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। খোলার পরও সরকার আমাদের টিকাদানের ব্যবস্থা করতে পারে। অনির্দিষ্টকালীন মহামারীতে আমাদের জীবনকে আর স্থবির না রেখে অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আমাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ করে দিন। 


এইচ. এম. মাহবুবুর রহমান 

অনার্স ৪র্থ বর্ষ, মার্কেটিং বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:

বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে আছি, তাদের অবস্থা আরো বিভীষিকাময়। সেশনজটের কারণে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে তাদের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারে না। করোনা পরিস্থিতি সেখানে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসে, যাদের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন গ্রাজুয়েশন শেষে একটি চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরা। করোনা পরিস্থিতিতে সেই স্বপ্ন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।  সেই সাথে পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারাটা প্রতিনিয়ত হতাশার জন্ম দিচ্ছে যা ধীরে ধীরে শুধুই বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তাছাড়া নীতিনির্ধারকদের সঠিক সীদ্ধান্তের অভাব শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এবং শঙ্কিত। কখন তারা তাদের গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরির প্রতিযোগীতায় নামবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই তীব্র প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের উচিত বাস্তবতা বিবেচনা করে সময়োপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব সীদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং অতিদ্রুত তার বাস্তবায়ন করা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা লাঘব হয়।


ফারহানা সুলতানা

অনার্স ৪র্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত সকল পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। কথায় আছে - অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ অবকাশে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা আজ সিভিয়ার করোনায় আক্রান্ত। সিভিয়ার করোনা থেকে জাতিকে বাঁচাতে হলে সরকারকে নতুন করে এখনই ভাবা উচিত।

ক্রমাগত লকডাউন আর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণায় আমরা শিক্ষার্থীরাও হাঁপিয়ে ওঠেছি। সরকার যতই চাকুরীতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি কিংবা চাকুরীর বয়স বৃদ্ধির কথা বলুক, বাস্তবতা হলো সরকার তো আর কারো জীবনসীমা (Life Time) বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখেন না।

আমার জোর দাবি সরকারের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে টীকাদান কর্মসূচি কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হউক। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল কিংবা ডিপার্টমেন্টে অস্থায়ী টীকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।


মো.আব্দুর রহমান শুভ

অনার্স ৪র্থ বর্ষ, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:

করোনা মহামারিতে অনেক প্রতিষ্ঠান সচল থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস ধরে। অনলাইন এবং বিকল্প পদ্ধতিতে উদ্যোগ থাকলেও তা শহরকেন্দ্রিক এবং অপ্রতুল। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা শিক্ষার্থীদের মতই আমিও ভুগছি নানাবিধ মানসিক সমস্যায়। যেখানে ২০২০ এ স্নাতক শেষ হতো সেখানে ২০২১ এও শেষ হবে কিনা সংশয়! 

তাছাড়া পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় আমার প্রতি পরিবারের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। এদিকে বয়সও বাড়ছে দিনদিন। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও চাকরির বয়স তো আর থেমে নেই। সুতরাং অতিসত্বর অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া উচিত বা শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষাগুলো গ্রহণের সিদ্ধান্তে আসা উচিত। অন্যথায় মাসের পর মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে হাজারো শিক্ষার্থী করোনা থেকে বাঁচলেও দারিদ্রতা, বেকারত্ব, বিষণ্নতা, মানসিক সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।

সময় জার্নাল/এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল