মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্যাম্পাসে জনসমাগম হবে, বাজারে হয় না?

সোমবার, মে ২৪, ২০২১
ক্যাম্পাসে জনসমাগম হবে, বাজারে হয় না?

এস.এম নাদিম মাহমুদ: এই করোনার কথা বলে আমাদের জীবন থেকে প্রায় ১ বছর ৩ মাসের অধিক সময় কেড়ে নিলো। যখন ভার্সিটি বন্ধ হয় তখন আমাদের টিএসসির চা বিক্রেতা মামাকে জিজ্ঞেস করলে উনিও বুঝতে পারতো যে এই ভাইরাস আগামী ২-৩ বছরেও যাবে না। কিন্তু আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এইটা বুঝে না। তারা ৭ দিন ১৫ দিন করে বন্ধ দিয়ে শুধু তামাসা করে যাচ্ছে। তারা ১ বছরেও  সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

আমাদের কে তারা ভবিষ্যৎ  বলেন। ভবিষ্যৎ এর উপর তারা রিস্ক নিবে না। অথচ ভবিষ্যৎরা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায় আছে।

আমাকে ক্যাম্পাসে না যাইতে দিয়ে বাসায় রেখে তারা করোনা সংক্রমণ রোধ করছে। অথচ আমার বাসার সবাইকে বাইরে যাইতে হয়। আমার আব্বা ফ্রন্টলাইনার। তাকেও যেতে হয়।এছাড়াও সব করা লাগে। এত মানুষের সাথে চলাচল করার পর তারা বলে আমি ক্যাম্পাসে না গেলে করোনা মুক্ত থাকবো।

আজকে যারা বন্ধ চাচ্ছে তারা বেশিরভাগই যেয়ে দেখেন তারা বেশিরভাগই যুক্তি দেখায় করোনার কারনে ক্যাম্পাসে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে সে দায় কে নিবে?

ভাই,আপনাদের বলি,আপনারা পরে এসেই ক্লাস করেন। আপনাদের আসতেই হবে কেউ বলে নাই। রি এড এর অপশন আছে প্রতিটা ভার্সিটিতে। আপনারা চাইলেই সেভাবে করোনা গেলে ক্লাস করতে পারবেন। আপনাদের আসতেই হবে কেউ বলে নাই। কিন্তু আমাদের মতো যারা আছে যাদের ওপর ফ্যামিলি তাকিয়ে থাকে তাদের জন্য এই অবস্থায় বসে বসে মুখ বুজে বাসার অন্ন ধ্বংস করা আত্নসম্মানবোধ না থাকলেই সম্ভব।

অনেকেই বলেন যে করোনার ভ্যক্সিন দিয়ে ক্যাম্পাস খুলবে আগামী ২-৩ বছরেও সেইটা হবে কিনা সন্দেহ আছে। ভ্যক্সিন যাও আসে সেগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আসে না। এখন আপনাদের জন্য ২-৩ বছর বসে থেকে এরপর ক্লাস করা সম্ভব হলেও আমার মতো অনেকের জন্যই তা অসম্ভব। 

এরপর শুরু হইলো অনলাইন ক্লাস নামক আরেক জিনিস। আমি নাদিম ৯৫% এর উপর ক্লাস করেছি। বাকি ৫% করতে পারি নাই এই কারেন্ট না থাকা আর নেটের সমস্যার জন্য।কিন্তু আমার রেগুলার ক্লাসে ১০০% উপস্থিতি থাকা আমার সহপাঠী ক্লাস করতে পারে নি।একটা ক্লাসে ২০-২২ জন উপস্থিতি নেট নাই, ডিভাইস নাই এরমধ্যে অনলাইন ক্লাস করতে বলা পরিহাস নয় কি ঢাল তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধ করতে যেতে বলার মতোই বলা যায়। এরপর ডিভাইস এর টাকা দিলো ততদিনে আমাদের এক সেমিস্টার শেষ হয়ে অন্য সেমিস্টার শুরু হয়ে গেছে। ডিভাইস দিছেন ভালো কথা, এম্বি লাগবে,সবচেয়ে বড় কথা নেটওয়ার্ক লাগবে।
নেটওয়ার্ক ই নাই এম্বি আর ডিভাইস দিয়ে ক্লাস করার চিন্তা করা সেখানে বিলাসিতা। আমি ঢাকায় থাকি তাও আমার ক্লাস মিস হইছে। এখন অনেকে বলবেন প্রাইভেটের স্টুডেন্ট কিভাবে ক্লাস করে? ভাই ওদের যে সেমিস্টার ফাইনালের ফি সেটা পাবলিকে পড়া এমন অনেক ছাত্র আছে যাদের ৬ মাসের ফ্যামিলি উপার্জন করে সেটা। ওখানে যারা ভর্তি হয় তারা এই সেমিস্টার ফাইনালের খরচ দিতে পারলে নেটের খরচ দেয়া তাদের জন্য কিছুই না। তো তাদের সাথে আমাদের দয়া করে তুলনা কইরেন না।

এবার আসি আমার ৯৫% উপস্থিত থেকে কি লাভ হইছে? একদম কিছু শিখি নাই, এটা বললে মিথ্যা কথা বলা হবে। শিক্ষকরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আমাদের বুঝানোর। তারা এজন্য আসলেই আমাদের থেকে ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমাদের জন্য যেমন এটা নতুন, তাদের জন্য এটা নতুন। কিন্তু এই ক্লাস করতে যেয়ে আমার এখন চোখে সমস্যা  আগেও ছিলো। এখন আরও বেশি করে বাড়ছে। কান ব্যাথা আর মাথা ব্যথা এগুলো নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যাওয়া এখন রেগুলার ডিউটি হয়ে পড়ছে।

এখন অনেকেই বলবেন যে ফেসবুক চালাও যখন তখন হয় না এগুলো? ভাই এই লেইম যুক্তি দিয়া অনলাইন ক্লাস ডিফেন্ড করতে আইসেন না। আগে ৩ ঘন্টা চালানো লাগলে এখন ৬ ঘন্টা চালনো লাগে। যারা পিডিএফ পড়েন তারা আরো ভালো বুঝতে পারবেন যে এই ছোট ছোট লিখা মোবাইলে পড়া কতো ঝামেলা।

এবার আসি স্বাস্থ্যবিধির দোহাই দিয়ে এই যে ভার্সিটি বন্ধ রাখা। সবকাজ চলতে পারে শুধু ভার্সিটির বেলায় বন্ধ। কওমি মাদ্রাসা গুলো অনেক আগে থেকে খোলা কই তাদের তো কাউকে শুনলাম না যে সংক্রমণ হইছে। আল্লাহ যেন তাদের সংক্রমণ না করে সেই দোয়া করি। যাইহোক, একবার চিন্তা করেন ফেরি পার হয়ে মানুষ চলাচল করতে পারবে, বাজারে যেতে পারবে, সব জায়গায় যেতে পারবে শুধু ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না। ক্যাম্পাসে জনসমাগম হয়, বাজারে হয় না?  ফেরি তে হয় না? নাকি ভাই ওইখানে করোনা দের প্রবেশাধিকার নিষেধ। যারা বলে আমি পান খাই আমার করোনা হবে না, আমার চোদ্দগুষ্টিতে কারো করোনা হয় নাই তারা সবজায়গায় যেতে পারবে, আর আমরা ক্যম্পাসে গেলেই করোনা হবে। 

আমরা যে কেউ বাসায় বসে থাকি না এটা সবাই জানে। কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এভাবে বসে থাকা সম্ভব না বাসায়। যদি হতোই তাহলে মানুষ ইচ্ছা করেই জেলখানায় যেত। যাদের খাবার নেই তারাও জেলখানায় যেতে চায় না। যদিও সেখানে খাবার সহজেই পাওয়া যায়।

সরকারীর চাকরির একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে।আমাদের এই যে এখন বসায় রাখতেছেন কিন্তু ওই চাকরির সময় তো এই যে বসে আছি এটার জন্য তো বাড়াচ্ছেন নাহ। অনেকেরই বয়স চলে যাচ্ছে শুধু এই বসে থাকার জন্য । আপনারা এতো দায়িত্বশীল এখানে কেন আপনারা উদাসীন ।

আমরা যে মানসিক ভাবে একটা অবসাদ এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এটা কেউ দেখতেছে না।এখন সুইসাইড বাড়তেছে এই কারণে। সবাই অবসন্ন হয়ে যাচ্ছে তবু আপনারা কেউ দেখতেছেন না। আবার আপনারাই বলেন আমরাই ভবিষ্যৎ। 

লেখক: এস.এম নাদিম মাহমুদ, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল