রুহুল সরকার. রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
বিয়ে হওয়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সন্তান না হওয়ার অভিযোগে মাঝেমধ্যেই মারপিট করা হত তাসলিমা খাতুনকে। কখনো মারপিট করতেন স্বামী আবার কখনো শশুর শাশুড়িও যুক্ত হতেন মারপিট করতে।
শনিবার(১৮ নভেম্বর) সকালে শশুর শাশুড়ী ও দেবরের অমানুষিক নির্যাতনে তসলিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে এই অমানবিক ঘটনা ঘটে।
নিহত তসলিমা খাতুন(২৫) পাশ্ববর্তী জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মৌলভীরচর এলাকার মৃত সালাম এর কন্যা।
নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায় প্রায় ১০ বছর আগে বদরপুর গ্রামের রহিজল হকের পুত্র মুকুল হোসেনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয় তাসলিমার। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক এবং সন্তান না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই তাকে নির্যাতন করা হতো। পিতার মৃত্যুু ও পারিবারিক ভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় মুখ বুঝে সব নির্যাতন সহ্য করত তাসলিমা।
প্রত্যক্ষদর্শী মরিয়ম আক্তার (৫৫) জানান, আজকে (শনিবার) তাসলিমা বাড়ির টয়লেটের দরজার সামনে কাজ করছিল। তার দেবর সানোয়ার(২০) টয়লেটে যাবে, তাকে সরে দাঁড়াতে বললে সরতে কিছুটা দেরি হয়।এসময় তার শাশুড়ী সালেহা খাতুন (৪০) গিয়ে তাকে লাথি ও কিল ঘুষি মারতে থাকে এসময় তার শশুর রহিজল(৪৮) তাকে আরও মারধর করতে বলে।পরে শশুর, শাশুড়ী ও দেবর মিলে এলোপাতাড়ি পেঁটায় তাসলিমাকে তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে আমাকেও মারতে আসে।
এসময় আমাদের চিৎকার শুনে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসলে সানোয়ার ও তার বাবা পালিয়ে যায়। পরে তাক উদ্ধার করে জ্ঞান হারানো অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত গৃহবধূর যা (দেবর এর স্ত্রী) মোমেনা খাতুন (২৩) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তাসলিমা ভাবীর বিয়ে হইছে প্রায় ১০বছর। কোন পোলাপান (সন্তান) না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই মারপিট করে তার স্বামী। আমারও তিন বছর হইলো বিয়ার। আমাকেও নির্যাতন করে সামান্য কোন ভুল করলেই নির্যাতন চালায়।
প্রতিবেশী লাল মিয়া (৪২) ও আব্দুল লতিফ (৫০) বলেন, মেয়েটা অত্যান্ত ভালো ছিলো। মুকুল(তাসলিমার স্বামী) যখন দিনমজুরির কাজে ঢাকায় যায় তখন বাড়ির বউটারে অত্যাচার নির্যাতন করে তার সৎ শাশুড়ী, শশুর ও দেবর। আজ এমনভাবে মেয়েটাকে মারছে যে মেয়েটা মইরাই গেলো। আমরা এই হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নিহত তাসলিমা খাতুন এর স্বামী মুকুল হোসেন ঢাকায় দিনমজুরি করতে যাওয়ার তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজীবপুর থানার আতাউর রহমান (ওসি তদন্ত) বলেন, বদরপুর গ্রামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে প্রাথমিক ভাবে শাশুড়ি সালেহা খাতুন'কে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত বাকিদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহতের স্বজনরা থানায় আসলেই মামলা নেওয়া হবে।
এমআই