আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একজোট হয়ে ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের প্রায় অর্ধেক এলাকা। গৃহযুদ্ধের জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন লক্ষাধিক নাগরিক। এই পরিস্থিতিতে চীনের দ্বারস্থ হলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। ওই দেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাইয়ের সাথে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করেছেন জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়েসহ কয়েকজন সামরিক শীর্ষকর্তা।
মিয়ানমারের সরকারি টিভি চ্যানেল ‘গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমার’-এ প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, 'বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, দু’দেশের জন্য লাভজনক যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসন বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।' তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৈঠকের বিষয়ে চীনা দূতাবাস বা ওই দেশের সরকারি সংবাদ সংস্থার তরফে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ‘স্থিতিশীলতা’ ফেরানোর অছিলায় মিয়ানমারে চীনা পিললস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ঢুকতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাদের মতে চাপে থাকা জান্তা সরকারের উপর প্রভাব খাটিয়ে মিয়ানমারকে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য করতে পারে শি জিনপিং সরকার। এটি নয়াদিল্লির পক্ষে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)-এর ধাঁচে রাখাইন প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিয়াউকফিউ বন্দর মারফত বঙ্গোপসাগরেরর ‘নাগাল’ পেয়ে যাবে লালফৌজ!
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতন্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী আং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করেছিল মিয়ানমার সেনা। জারি হয়েছিল সামরিক শাসন। তার পর থেকে ওই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নানা প্রান্তে শুরু হয় বিদ্রোহ।
সম্প্রতি উত্তর মিয়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশে সাফল্যের পরে পশ্চিমের চীন এবং রাখাইন প্রদেশেও হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’।
চলতি মাসে ওই জোটের সহযোগী হয়েছে, পশ্চিম মিয়ানমারে সক্রিয় বিদ্রোহী বাহিনী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জান্তা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গৃহযুদ্ধের জেরে পাঁচ হাজারেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন ভারতের মিজোরাম রাজ্যে। অন্যদিকে ইতিমধ্যেই অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করেছে বিদ্রোহী জোট। চীনগামী মূল সড়কটিও তাদেরই দখলে। এর ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জান্তা সরকারের অভিযোগ।
সময় জার্নাল/এলআর