সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা : রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদে আজহার হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তাঁর স্ত্রী আসমা আক্তার (২৪) ও মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের (৫৪) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নিভানা খায়ের জেসী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজ আসমা আক্তার ও দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানকে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারের ছয় টুকরো গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যায় রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পরকীয়ার জেরে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান তার এক ছাত্রের নামে একটি মুঠোফোন কেনেন। পরবর্তীতে সিমসহ মুঠোফোনটি আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে দেন। নতুন ওই ফোনে হত্যা সম্পর্কে পরিকল্পনা করেন আসমা ও আব্দুর রহমান।
কখন হত্যার পরিকল্পনা করা হয় তা জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, রমজান শুরুর সাত দিন আগে ইমাম ও আসমা আক্তার আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ মে দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে নিজের থাকার ঘরে আজহারকে হত্যা করেন ইমাম আব্দুর রহমান। এরপর রাতভর মসজিদেই লাশ ছয় টুকরো করেন তিনি। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রথমে আব্দুর রহমানকে পরে সন্ধ্যায় আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
র্যাবের এ পরিচালক বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সরদারবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানকে। দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে নিহত আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম আসমাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, আসমা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল মাওলানা আব্দুর রহমানের। এ পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আসমা ও আব্দুর রহমান দুজনে মিলে পরিকল্পনা করতে থাকেন, কীভাবে আজহারকে হত্যা করা যায়। প্রথমে আসমা আক্তার আব্দুর রহমানকে লোকজন দিয়ে আজহারকে হত্যা করার কথা বলেন। কিন্তু হত্যায় কোনো প্রমাণ রাখতে চাননি ইমাম। ফলে তিনি চেয়েছিলেন একাই হত্যা করতে।
আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, পরে ইমাম ও আসমা দুজন পরামর্শ করে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা সাজান। ঈদে টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়ি ছিলেন আসমা ও তার স্বামী আজহার। ঈদের পরে একটি কাজের কথা বলে আসমা দ্রুত আজহারকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় আসার পর মাওলানা মো. আব্দুর রহমান গত ১৯ মে রাতে আজহারকে মসজিদে ডেকে নেন। তারপর মসজিদের ভেতরে ইমামের থাকার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় আজহারকে। সেখানে নিয়ে আব্দুর রহমান তাকে ধারালো অস্ত্রের কোপ দেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তারপর রাতভর লাশ ছয় টুকরো করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাওলানা মো. আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি ৩৩ বছর ধরে দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে ইমামতি করেন। পাশাপাশি শিশুদের কোরআন শিক্ষাও দেন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, আটক আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কারণ, ভুক্তভোগীর ছেলে (৪) ওই মসজিদের মক্তবে পড়তে যেত। শুধু তাই নয়, আজহারও ইমাম আব্দুর রহমানের কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম প্রায়শ আজহারের বাসায় যেতেন।
র্যাবের অধিনায়ক আরও বলেন, গত ১৯ মে অর্থাৎ বুধবার রাতে আজহার মসজিদে যান। তারপর ইমামের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারকে কোপ দেন ইমাম আব্দুর রহমান। এতে আজহার ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে ঘটনা লুকাতে তিনি লাশ ছয় টুকরো করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, মো. আব্দুর রহমান স্বীকার করেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি একাই আজহারকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করেন।
সময় জার্নাল/এসএ
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল