অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
রায়পুরের নয়টি ও লক্ষ্মীপুর সদরের নয়টি ইউনিয়নসহ মোট আঠারোটি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর সংসদীয় আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ভোটের যুদ্ধে লড়বেন নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এই আসন থেকে তিনিসহ মোট ১২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তবে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তার সাথে বিভিন্ন শরীক দলের হয়ে নির্বাচনের মাঠ সরগরম রাখছেন জাতীয় পার্টির বোরহান উদ্দিন আহমেদ (লাঙ্গল), জাসদের মো.আমির হোসেন মোল্লা (মশাল), তৃণমূল বিএনপির আব্দুল্লাহ্ আল মাসুদ (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির জহির হোসেন (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেস জোটের মো. মনসুর রহমান (ডাব), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. মোরশেদ আলম (চেয়ার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. শরিফুল ইসলাম (মোমবাতি), মুক্তিজোটের মো. ইমাম উদ্দিন সুমন (চড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা (তরমুজ) ও মো: ফরহাদ মিয়া (হাত ঘড়ি)।
সাবেক এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের প্রার্থীতা নির্বাচন কমিশনার অবৈধ ঘোষণা করলেও আইনি লড়াইয়ে তা বৈধ হয়।
নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের স্ত্রী চৌধুরী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তরমুজ নিয়ে স্বামীর বিপরীতে লড়ছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও দলীয় অঙ্গসংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতারা দিধাদ্বন্ধে ভুগছেন।
নৌকা প্রতীকের ভোটের বড় একটি অংশ ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী নুর উদ্দিন চৌধুরী অনেকটা অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মতে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের বিপরীতে আরও এগারোজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। ফলে দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। কমে যাবে দলীয় প্রার্থীর ভোট। এ আসনটিতে নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এমপির স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। কারণ স্থানীয় দলীয় রাজনীতিবিদ, ইউপি চেয়ারম্যানের একটা অংশ তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনসহ নানা সহযোগিতা করে আসছেন।
দলীয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও বিপরীত প্রার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনীতি করে আসছেন। আবার অনেক নতুন মুখও এবারের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা সংসদীয় আসন চষে বেড়িয়েছেন। তাদের অনেকের সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া এই আসনের সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন থেকে প্রার্থী নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, হামছাদী ইউনিয়ন থেকে শরীফুল ইসলাম, দালাল বাজার ইউনিয়ন থেকে আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও মোরশেদ আলম, অঞ্চলভিত্তিক ভোটারের দৃষ্টি তাদের ওপরও থাকবে।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হবো। আমার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা অনেক আগে থেকেই। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই এই সংসদীয় আসনে আমার নেতা-কর্মীরা প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়া রায়পুরে যারা রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেন, সবার সঙ্গেই আমার ওঠাবসা আছে। আশা করি, নির্বাচনে সমস্যা হবে না। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মাওলানা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এই আসনের ভোটাররা আমাকে পছন্দ করেন। আমি গত এক যুগ ধরে এলাকায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছি। সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার পাশে আছেন। আমি আমার জনপ্রিয়তা দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব।’
জাতীয় পার্টি প্রার্থী বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের যেসব গুণাবলি ও যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তার সবটুকুই আমার আছে।’ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জনগণের পাশে থেকেছেন বলে জনগণই তাকে মূল্যায়ন করবেন বলে তিনি জানান।
নৌকার প্রার্থী নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘প্রার্থী যত বেশি হবে নির্বাচনও তত বেশি জমে উঠবে। নির্বাচন মানেই চ্যালেঞ্জ। বিগত সময়ে এই সরকারের আমলে রায়পুর-২ আসনে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। গত উপনির্বাচনে স্বল্প মেয়াদে রায়পুর আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করায় এবারও সাধারণ জনগণ আমাকে এমপি নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচনে সকল জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে এবং সবাই ভোট দিতে আসবেন।’
সময় জার্নাল/এলআর