শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ফিরে দেখা

অস্ত্রের ঝলকানি, বোমার আঘাত, যুদ্ধ-মৃত্যুর বাস্তবতায় বন্দী পৃথিবী

সোমবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩
অস্ত্রের ঝলকানি, বোমার আঘাত, যুদ্ধ-মৃত্যুর বাস্তবতায় বন্দী পৃথিবী

সময় জার্নাল ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই বন্দী থেকে বিশ্ববাসী চেয়ে চেয়ে দেখেছে নিজেদের সর্বনাশ। অনেকের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস। তবুও যখন এর প্রকোপ কমেছিল, বিশ্ব কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। এবার তাহলে অন্তত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাটা করা যাবে।

কিন্তু সেই চেষ্টা কি আর করা গেল? গোছানোর আগেই ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’।

ভীষণ রাগে যুদ্ধ শুরু হলো। অস্ত্রের ঝলকানি, বোমার আঘাত, কামানের গোলার ক্ষিপ্রতা ছাপিয়ে আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র। আর পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি তো আছেই।

শুরুটা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এই আগ্রাসনকে বেশ কয়েকবার নিজেই ‘যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাতে বিশ্ব দুই ভাগ হয়ে গেল। ইউক্রেনে একের পর এক সহায়তার ঘোষণা দিল আমেরিকা ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। সরাসরি ঘোষণা না দিলেও রাশিয়ার পক্ষ নিল ইরান ও উত্তর কোরিয়া। চীনকেও পাশে পেল রাশিয়া।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৪০০ রুশ সেনা নিহতের দাবি করে ইউক্রেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও নিহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। এরপর ৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন পুতিন। তবে হামলা কিন্তু থেমে থাকেনি। আর ২০২২ সালের মতো এ বছরও ইউক্রেনে সহায়তা দিতে শুরু করে আমেরিকা ও ন্যাটো।

এরপর বছরজুড়েই হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। আর ইউক্রেন প্রতিহত করেছে। তবে এবার রাশিয়াতেও বেশ কয়েকবার হামলা চালানোর দাবি করেছে ইউক্রেন। এমনকি রুশ জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছবিও প্রকাশ করা হয়। 

সবকিছু ছাপিয়ে এই ইস্যুতে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় ‘ওয়াগনারের বিদ্রোহ ও দমন’। গত জুনে রাশিয়ার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয় দেশটির ভাড়াটে এই সেনাদল। সংস্থাটি জানায়, রুশ নেতৃত্ব পতনের জন্য তারা সব ধ্বংস করে দেবে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার অডিও বার্তাও দেন ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।

অক্টোবরে হামাস–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এই যুদ্ধ কিছুটা আবেদন হারায়। এর মধ্যেই দেশটিতে সহায়তা দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি একমত হতে ব্যর্থ হয় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর আগেই অবশ্য পোল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

তবে এ জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। হামাসের হামলার জবাবে গাজায় একের পর এক বোমা হামলা করতে থাকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। একসময় স্থল অভিযান শুরু হয়। হামলা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

হামাসকে নির্মূলের কথা বলে ইসরায়েলের চলমান এই হামলায় ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ মাসে প্রায় ১৬ হাজার নিরীহ মানুষ মারা যায়। এদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। সংবাদ সংস্থা আনাদুলু বলছে, নিহতদের ৬০ শতাংশ নারী ও শিশু। ঘরছাড়া হয় লাখো গাজাবাসী। স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র ও হাসপাতাল পরিণত হয় কবরস্থানে।

ইসরায়েলের পক্ষে রয়েছে আমেরিকা। যুদ্ধবিরতিতে ভেটো দিয়েই যাচ্ছে তারা। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে পাশে। আরব নেতারা এর বিরোধিতা করছেন। তবে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে নেই কোনো দেশই।

এর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য সংঘাত চলছে আলজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, চাদ, কঙ্গো, ঘানা, আইভরি কোস্ট, নাইজার, সুদান, তানজানিয়া, টোগো, তিউনেশিয়া, উগান্ডা, ইয়েমেন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, আফগানিস্তান, মালি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইথিওপিয়ায়। গাজা ও ইউক্রেনের কথা আগেই বলা হয়েছে।

ইয়েমেনে এখন জাতিসংঘের চেষ্টায় হওয়া শান্তি কার্যকর হলেও উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। একই অবস্থা ইথিওপিয়ায়। যেকোনো সময় আবার সরাসরি যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।

মাঝে থেকে যা ক্ষতি হওয়ার, তা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। হাজার হাজার শিশু মারা পড়ছে। জন্মেই তারা দেখছে মানুষে–মানুষে হিংসা। এক ইউক্রেন যুদ্ধেই কত মানুষ মারা গেছে। গাজাতেও সেই ভয়াবহতা। ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বাজারেও অস্থির পরিস্থিতি ক্রমে লাগামছাড়া হচ্ছে। প্রবাদের সেই কথাটাই বারবার ফিরে আসে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল