এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি :
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও জোয়ারের পানির প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাটে ভেসে গেছে ৫ হাজার চিংড়ি ঘের। এতে জেলার মাছ চাষীরা প্রায় ৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানিতে এসব মাছের ঘের ভেসে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার রামপাল, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার মাছ চাষিরা। এসব উপজেলার চিংড়ি চাষিরা নেট ও পাটা দিয়ে ঘের রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাট মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, জেলার রামপাল উপজেলায় ৪ হাজার ৮৩৭টি, মোংলায় ৫ হাজার ৬০১টি, শরণখোলায় ১ হাজার ৩৪২টি ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় চিংড়ি ঘের রয়েছে ৯ হাজার ৯২০টি। এর মধ্যে চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে গেছে প্রায় ৫ হাজার। বাগেরহাট জেলায় ৭১ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে ৮১ হাজার ৩৫৮টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। আর চিংড়ি চাষি রয়েছে ৭৯ হাজার ৭৩৬ জন।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুকরা গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন ঢালি বলেন, গতকাল পানিতে আমার ১২ বিঘার তিনটি ঘেরের মধ্যে দুটি পুরোপুরি ভেসে যায়। একটি আংশিক ডুবে ছিলো, নেট ও পাটা দিয়ে ঘেরটি রক্ষার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটিও আজ ভেসে গেছে। এতে আমার ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার মত অন্যান্য ঘের মালিকও তাদের ঘের রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে জোয়ারের পানির তরে অধিকাংশ ঘেরই ভেসে গেছে।
শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ী এলাকার মিজান গাজী বলেন, “মুই গরীব মানুষ ভাই। এনিজও ও এলেকার বিভিন্ন মানুর কাছ থাইক্কা টাহা-পয়সা ধার দেনা কইরা ৩ বিঘার দুইডা ঘের করছেলাম। এই ঘেরে টাহায় মোর সংসার চলে। মুই তো পথের ফহির হইয়া গেলাম বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি।
মোড়েলগঞ্জের জিউধরা ইউনিয়নের নিশানবাড়ীয়া গ্রামের রুবেল শরীফ বলেন, “ভাই মোগো এইহানে এহন আর মোর আর তার নাই, সব এহন সমান। নেট-পাটা দিয়াও ঘের রাখতে পারি নাই, সব ডুইব্বা গেছে”। কাইলগোর থাইকা আইজগো পানি আরও বাড়ছে”।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাস ও জোয়ারের পানির প্রভাবে জেলার রামপাল, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে। প্রাথমিক ভাবে আমরা ধারনা করছি এতে ক্ষতি প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এমন অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে।
সময় জার্নাল/ইএইচ