বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

অধ্যাপক পারভেজের যে কৌশলসমূহ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে

শনিবার, জানুয়ারী ২৭, ২০২৪
অধ্যাপক পারভেজের যে কৌশলসমূহ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অর্থনীতিবিদ ও ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চের (এনবিইআর) চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ গরীব বান্ধব অর্থনীতিবিদ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। গরিবের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি কথা বলেন গরীব বান্ধব বাজেট, অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন কণ্ঠস্বরই শুধু নন, তিনি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব এক কৌশলপত্র তৈরি করেছেন। এই লেখায় অধ্যাপক পারভেজের ’এক পলকে একটু দেখা, অধ্যাপক পারভেজের জীবন ও দর্শন’  বই থেকে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে তার পরামর্শ, কৌশলপত্র তুলে ধরা হল। 

প্রফেসর পারভেজ মনে করেন, নাম বা রং যা-ই হোক, দুর্নীতি হচ্ছে জনগণকে বঞ্চিত করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার, যা অসমতা ও সামাজিক অবিচার সৃষ্টি করে। দুর্নীতি সকল প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজরা যেকোন দেশে জনগণ ও সমাজের শত্রু। একারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশ দুর্ভোগ কবলিত লোকের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে মানবাধিকার, মানবীয় মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হলে যে সুশাসন প্রয়োজন তার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং সততার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। 

যদিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতি পরিমাপে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, তথাপি পর পর পাঁচ বছর দুর্নীতি অনুধাবন তালিকায় শীর্ষস্থানে অবস্থান করার ফলে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে এবং এ অবস্থায় অধিকাংশ নাগরিক বুঝতে পারেনি, এই দুর্নীতি নামক মানব সৃষ্ট শোষণ যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কি করতে হবে এবং কিভাবে শুরু করতে হবে। এই ধরনের পীড়নমূলক দুর্নীতিবাজ শাসন ও সামাজিক ব্যবস্থা কবলিত অবস্থায় সচেতন নাগরিকরা মিডিয়ার মাধ্যমে বা সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে গোলটেবিল আলোচনা, সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে মিডিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমরা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে, দুর্নীতিবাজ চক্রটি কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সাথে সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে। সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা আদালতকে ব্যবহার করে মামলা ও নিষেধাজ্ঞা মূলক যে ব্যবস্থার আশ্রয় নেয় তার হাত থেকে মিডিয়াকে রক্ষার জন্য আইন করা উচিত। দুর্নীতিবাজরা মিডিয়ার একটি অংশকে দূষিত করার মাধ্যমেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার নাগরিক আন্দোলনগুলোকে নিষ্প্রভ করে দিতে পারে। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, আমলা ও ব্যবসায়ীর সম্পদের মত কিছু সাংবাদিকের ক্রমবর্ধমান সম্পদের ব্যাপারেও কেউ যদি খোঁজ খবর নেন তাহলে পরিস্থিতি কত ভয়ানক তা জানতে পারবেন। এছাড়াও এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ডজন ডজন পত্রিকা বের করে এবং বহু ইলেক্ট্রনিক চ্যানেলের মালিক ও নিয়ন্ত্রণকারী হবার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উত্থিত জনগণের কণ্ঠকে বিচ্যুত, নমনীয় এবং বিভ্রান্ত করেছে। 

এ ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতিতে অন্য আরো নাগরিকের মত একজন কলম সৈনিক হিসাবে আমি উপলব্ধি করছি যে, ডাক্তার, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, প্রকৌশলী, স্থপতি, আইটি এক্সপার্ট, সৎ কর্মকর্তা, ব্যাংকের নির্বাহী এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মত পেশাজীবীদের সংগঠিত করে আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরব, অ-হিংস উপায়ে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আমরা রোটারী, রোটারেক্ট, চেম্বার অব কমার্স এবং এনজিও'র সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছি, যাতে দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে ব্যাপক অংশগ্রহণ ও ক্রমবর্ধমান চাপ নিশ্চিত করা যায়। 

দুর্নীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেহেতু প্রত্যেক নাগরিকই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার শিকার হয় তাই আমরা দুর্নীতির শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন বোধ করি। এর ফলে যারা দুর্নীতির শিকার তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠবে। এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলনগুলোকেও বেগবান করবে।  এ ব্যাপারে সিজিজি যত বেশী স লোকের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে এবং আজ সিজিজি ৪ লাখের বেশী সো সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেছে, যারা দুর্নীতি অবসানে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে তথ্য ও ভাবের আদান প্রদান চালিয়ে যাচ্ছে। 

যোগ্যতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠায় শিক্ষাবিদ, গবেষক, পেশাজীবী এবং নীতি নির্ধারকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কাজ করছেন সেইসব শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সক্রিয়বাদীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে কেবলমাত্র সিজিজি-ই ওয়েব সাইট চালু করেছে। সেন্টার ফর গুড গভর্নেন্স (সিজিজি) বিশ্বাস করে, এর দ্বারা একটি ব্যাপক ভিত্তিক থিংক ট্যাংক গড়ে তোলা সহজ হবে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইরত সংস্থ সংগঠন ও ব্যক্তিদের যোগ্যতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। সিজিজি ওয়েব সাইট সব সময় একটি খোলা দ্বার হিসাবে থাকবে, এতে সবার সমান সুযোগ থাকছে কোন বৈষম্য থাকবে না এবং থাকবে নির্দলীয় নীতি। এই ওয়েব সাইটটিকে মানবাধিকার, মানবীয় মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার, সমতা এবং শাসন সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে একটি ই-নলেজ শিল্প হিসাবে গড়ে তোলা হবে। ধারে বিশ্বের যে কোন দেশের যেকোন মানুষ এ থেকে বিনামূল্যে ধারণাপত্র বা নীি বিষয়ক লেখা, গবেষণা প্রবন্ধ, রিপোর্ট, ম্যানুয়েল, পুস্তিকা, বই বা এ ধরনের অন্যান্য বিষয়ে অবাধে প্রবেশ করতে পারেন। 

দুর্নীতি দমনে সুনাম ও দুর্নাম কৌশল বেশ কার্যকর পদ্ধতি প্রমাণিত হয়েছে। 

যেকোন দেশে দুর্নীতি দমনে সুনাম ও দুর্নাম পদ্ধতি একটি খুবই কার্যকর কৌশল। এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে-যেখানে দুর্নীতিকে একটি অপরিহার্য দুর্ভাগ্য হিসাবে এক প্রকার মেনেই নেয়া হয়েছে-সেখানেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সুনাম ও দুর্নাম পদ্ধতি বেশ কার্যকর হয়েছে। ভারতে সিটিজেন এ্যাকশন গ্রুপের দ্বারা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস এবং সক্রিয়ভাবে প্রচার করা হয়েছে, যার ফলে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা অত্যন্ত অপমানজনকভাবে চাকরি থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং এমনকি সেখানে এধরনের ঘটনায় জনপ্রিয় ব্যক্তি বা পাবলিক ফিগার যাদের বলে সে ধরনের লোকের বিরুদ্ধেও ফৌজদারী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকারগুলো এ ধরনের কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি। তবে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জাগানোর জন্য সিটিজেন এ্যাকশন গ্রুপগুলো বা প্রচার মাধ্যম তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে, যার রেশ ধরে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও দমনে ফলপ্রসু হওয়া সম্ভব। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমাজে প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা ও শক্তিকে খাটো করে কেউ দেখতে পারে না। (চলবে)

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল