নিজস্ব প্রতিবেদক, সময় জার্নাল : আজ সোমবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘কমিট টু কোয়িট’। তবে ধূমপায়ীদের চেয়ে অধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়া অধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকিও কমা। তা ছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় কমপক্ষে ১০ বছর বেড়ে যায়।
শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারে করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২ থেকে ৪গুণ বেড়ে যায় এবং মুখ গহ্বর, ফুসফুস, খাদ্যনালিসহ প্রায় ২০ ধরনের ক্যানসার হয়। অধূমপায়ীর তুলনায় ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ গুণ। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস সংক্রমণে (সিওপিডি) ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৩গুণ পর্যন্ত বেশি। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
পরিবার এবং অন্যের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব অপূরণীয়। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেসেও পরিবহনে ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪ কোটি ৮ লাখ (৩৯%) মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।
তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ হার মাত্র ২৪ শতাংশ।
গ্যাটস ফলে আরো দেখা গেছে, ২০০৯ সালের তুলনায় একজন বিড়ি ব্যবহারকারীর বিড়ি বাবদ মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে, সিগারেট ক্রয় করতে একজন ধূমপায়ীর গড় মাসিক ব্যয় হয় ১০৭৭.৭ টাকা। অথচ শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য একটি পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় যথাক্রমে মাত্র ৮৩৫.৭ এবং ৭০০ টাকা (খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১৬)। তামাকের জন্য ব্যয়িত অর্থ শিক্ষা ও চিকিৎসা দারিদ্র্য তথা মানব দারিদ্র্য মোকাবিলায় ব্যয় করা গেলে পরিবারগুলোর জীবনমানে উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতি অধিক সংবেদনশীল। তামাকপণ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার, তামাকজনিত মৃত্যু ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি অধিক হারে হ্রাস পায়। তাই তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্রবান্ধব পদক্ষেপ।
সর্বোপরি ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জন করতে হলে সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের দাম সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে বৃদ্ধি করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সব পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (এইচটিপি) মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টগুলো আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ প্রভৃতি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ