নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এন্ড ইম্পোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে।
৩১ জানুয়ারি (বুধবার) দুপুর ১.০০ টায় হোটেল ওয়েস্টিন এ সমাঝোতা সাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এবং এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক জনাব আশরাফুল আম্বিয়া।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিমার্ক-হারল্যান এর পরিচালক চিত্রনায়ক শাকিব খান।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) জনাব ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারী জামাল উদ্দীনসহ এসোসিয়েশন ও অধিদপ্তরের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অফ বাংলাদেশের আহ্বায়ক জনাব আশরাফুল আম্বিয়া সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মানসম্মত প্রসাধনী প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণে দেশীয় উদ্যোক্তাদের এসোসিয়েশন উদ্ভুদ্ধ করবে। তিনি ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে অধিদপ্তরের প্রচারণামূলক কাজে সহযোগিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনায় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর মূলত ৩ ধরনের কাজ করে থাকে; প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হিসেবে বাজার তদারকি, প্রতিকারমূলক কার্যক্রম হিসেবে অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম। তিনি অধিদপ্তরের প্রচারণামূলক কার্যক্রমে সকলের সম্পৃক্ততা কামনা করেন। এছাড়াও তিনি দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নকল-ভেজাল প্রসাধনী সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রিমার্ক হারল্যান এর পরিচালক চিত্রনায়ক শাকিব খান অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় চলমান অভিযানের জন্য মহাপরিচালকসহ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মানুষ ভালোবেসে প্রসাধনী ক্রয় করে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য ভালোবাসার এই পণ্য যেন ত্বকের ক্যান্সারের মত বিভিন্ন রোগ না নিয়ে আসে। সে লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার মহতি কার্যক্রমে তিনি পাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রমের সূচনা হলো। তিনি প্রসাধনী সেক্টরের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, কনজ্যুমার্স কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-সিসিএমএস এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
আলোচনায় মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসঙ্গতি যথা কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না থাকা, প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতা নিজেই সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রদান করা, আমদানিকারক কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য কেটে অধিক মূল্য লেখা, বিদেশী পণ্য নকল করে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে বিদেশী পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়, নকল কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে সঠিক মানদন্ড না থাকা এবং বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ/অনুমোদনহীন ফেস ক্রিম, হোয়াইটিনিং ক্রিমসহ অন্যান্য কসমেটিকস বিক্রয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
সভায় মহাপরিচালক বলেন সকল কসমেটিকস প্যাকেটজাত। সেক্ষেত্রে মোড়কজাতকরণ বিধিমালা অনুসরণ করে পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশি কসমেটিকস এর ক্ষেত্রে আমদানীকারকের তথ্য থাকে না এবং আমদানীকারক কর্তৃক এমআরপি প্রদান করা হয় না। এছাড়াও কসমেটিকস পণ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা ভোক্তার ত্বকের ক্ষতি করছে।
তিনি বলেন, অধিদপ্তর ভোক্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশীয়ভাবে প্রসাধনী প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগকে আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। কেননা এর মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এর পক্ষ থেকে নকল কসমেটিকসের তথ্য প্রদান করলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশনের এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, অধিদপ্তরের প্রচারনা কার্যক্রমের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আমরা এসসোসিয়েশনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।
এমআই